কলকাতা: তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি সরিয়ে ভারতকে জাগরিত করার কথা লিখে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু  ভারত তো অনেক বড় ব্যাপার, কবির মৃত্যুর আট দশক পর কুসংস্কারের বেড়াজাল কাটিয়েই মুক্ত হতে পারেনি তাঁর বাংলা। এবার খাস কলকাতায় হাতেনাতে এর প্রমাণ মিলল। পুত্রসন্তান হওয়ার আনন্দে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরেই মোরগ বলি দিল পরিবার। (Kolkata Medical College)


মঙ্গলবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরেই এই ঘটমনা ঘটেছে। পুত্র সন্তান হওয়ার আনন্দে প্রসূতি বিভাগের পিছনেই পুজোর আয়োজন করে এক পরিবার। এমনকি সেখানে মোরগ বলিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি কানে পৌঁছতেই তড়িঘড়ি পুলিশ পাঠালেন হতবাক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই পুজো, মোরগ বলি সেরে উধাও হয়ে গেল প্রসূতির পরিবার। (Rooster Sacrificing in Kolkata)


হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা মন্নু গাস। দিন পাঁচেক আগেই  তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান মন্নু। বাড়ি যাওয়ার আগে হাসপাতাল চত্বরেই পুজোর আয়োজন করেন মন্নুর স্বামী।  স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার আগে হাসপাতাল চত্বরেই পান পাতায় সুপুরি সাজিয়ে, লাড্ডু এনে পুজোর আয়োজন করেন তিনি। ফুল-মালা-কর্পূর এনে পরানো হয় মোরগের গলায়। ছেলে হওয়ার আনন্দে সেই মোরগ বলিও দেন।


আরও পড়ুন: Sandeshkhali Chaos: সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতার বাড়ির উঠোনে পুলিশ পিকেট, সিসি ক্যামেরায় নজরদারি


এশিয়ার প্রথম মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। এখানে স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান সাধনা শুরু হয় ১৮৩৫ সালে। মঙ্গলবার বিকেলে সেই হাসপাতাল চত্বরেই দেখা গেল কুসংস্কারের নগ্ন চেহারা। সেখানেই এমন বেনজির ঘটনার সাক্ষী হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। যদিও এ নিয়ে নির্বিকার প্রসূতির পরিবার। তাঁর স্বামী দাবি, তাঁদের সংস্কৃতি অনুযায়ী সন্তানের জন্মের পর পুজো দিতে হয়। 

হাসপাতালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রলীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা কোনও দিন শোনা যায়নি। কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হাসপাতালের সুপার অঞ্জন অধিকারী বলেন, "কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমন ঘটনা ভাবতেই পারছি না। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।" 
কিন্তু ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে ভারত যেখানে চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলেছে, সৌরযান পাঠিয়েছে, কৃষ্ণগহ্বরে নজরদারি চালাতে মহাকাশযান পাঠিয়েছে, সেই সময়, কলকাতার বুকে মধ্যযুগীয় কুসংস্কারের এমন নিদর্শন দেখে হতবাক সকলেই।