ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, সোমনাথ মিত্র এবং সমীরণ পাল, হুগলি: বাবা ছিলেন সিপিএমের (CPIM) পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁর ছেলেই পরবর্তীকালে হয়ে উঠলেন যুব তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা! নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কুন্তল ঘোষ (Kuntal ) গ্রেফতার হওয়ার পরে হুগলির বলাগড়ে গিয়ে জানা গেল এমনই নানা কথা। কুন্তলকে টাকা দিয়েও চাকরি পাননি, এমন অভিযোগও করলেন কেউ কেউ।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করেছে ইডি। যাঁর বিরুদ্ধে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা নেওযার অভিযোগ করেছিলেন তাপস মণ্ডল। কুন্তল ঘোষের গ্রেফতারির পর তাঁর সম্পর্কে তথ্য় সংগ্রহ করতে আমরা পৌঁছেছিলাম হুগলিতে। সেখানেই এবিপি আনন্দর ক্যামেরার সামনে বিস্ফোরক দাবি করলেন হুগলির জিরাটের পাটুলি গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু লাহা।
তাঁর দাবি, কয়েকবছর আগে ছেলের চাকরির জন্য কুন্তল ঘোষকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগকারী ও চাকরিপ্রার্থীর বাবা শম্ভু লাহা বলেন, "ছেলের চাকরির জন্য ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম, কলকাতায় গিয়ে টাকা পৌঁছে দিয়েছিলাম। কুন্তলের হয়ে এক জন যোগাযোগ করিয়েছিল, ছেলের চাকরি শেষ পর্যন্ত হয়নি। মোবাইল ফোনের দোকান করে দিয়েছি। কিছুদিন আগে ক্যাশে ১ লক্ষ টাকা ফেরত দেয়। কুন্তল ২ লক্ষ টাকার চেক দেয়, সেটা মায়ের নামে। চেক বাউন্স করে।"
আরও পড়ুন, পরিচয় ছিল না পার্থর সঙ্গে, ৫০ লক্ষ চেয়েছিলেন তাপসই, মারাত্মক অভিযোগ যুব তৃণমূল নেতা কুন্তলের
শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করে কুন্তলকে প্রভাবশালী যুব নেতা বলে মন্তব্য করেন ইডির আইনজীবী। কুন্তল ঘোষ কতটা প্রভাবশালী, কীভাবে তাঁর উত্থান, সে সম্পর্কে বিভিন্ন দাবি শোনা গেল হুগলির জিরাটে গিয়ে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "২০১৪ সালে কুন্তল নিজে টেটের প্রার্থী ছিল, আমার স্ত্রীর সঙ্গে টেটে পাস করেছিল, এরপর ও আস্তে আস্তে এরকম ফুলে ফেঁপে ওঠে।"
জিরাট থেকে কিছুদূরে, হুগলির বলাগড়ের শ্রীপুরে কুন্তলের পৈতৃক বাড়ি। কুন্তলের বাড়ির কেয়ারটেকার দীপক বিশ্বাস বলেন, "মাসখানেক আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এসেছিলেন কুন্তল শেষবার। স্ত্রী এবং মা সঙ্গে থাকেন। বাবা মারা গেছেন। বাবা ছিলেন সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান।"
হুগলির ধনেখালির ভাণ্ডারহাটিতে ইন্দিরা দেবী ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন। এই কলেজেরই অন্যতম অংশীদার কুন্তল। ক্যামেরার সামনে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও, স্থানীয় সূত্রের দাবি, মাঝেমধ্যেই এই কলেজে দেখা যেত প্রভাবশালীদের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কুন্তলের বাবা স্বপন ঘোষ, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ অবধি সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। ২০১৬ সালে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হন কুন্তল। ধীরে ধীরে জেলা যুব তৃণমূলের অন্যতম নেতা হয়ে ওঠেন তিনি। হুগলি জেলার সিপিএম এর জেলা কমিটির সদস্য অতনু ঘোষ বলেন, "একটা সময় পরিবারটা আমাদের ছিল তখন কুন্তল ঘোষ অনেক ছোট ছিল। স্বপন ঘোষ শ্রদ্ধেয় মানুষ, প্রধান ছিলেন। আর তার ছেলে রাজনীতি করে অর্থ রোজগারের জন্য।"
কখনও মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে কুন্তলের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। কখনও তাঁকে দেখা গেছে রাজ্য যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষের সঙ্গে। ইডির তদন্তের মাঝে এই ছবি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যদিও কোর্ট থেকে বেরনোর সময় কুন্তল ঘোষ বলেন, "এই মামলায় আমার দলকে কোনও ভাবে যুক্ত করবেন না।" কুন্তলের শাস্তির দাবিতে বলাগড়ের রাস্তায় পোস্টার দিয়েছে বিজেপির যুব মোর্চা।