দীপক ঘোষ, কলকাতা: ঝরছে গেরুয়া গ্ল্যামারঅভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ধর্নামঞ্চে এলেন বিজেপির ( BJP ) রিমঝিম মিত্র ( Rimjhim Mitra ) , বুঝিয়ে দিলেন তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান। গত বিধানসভা ভোটের আগে টালিগঞ্জের যে অভিনেত্রীকে ঘটা করে দলে নিয়েছিল বঙ্গ বিজেপি ( Bengal BJP ) , রবিবার তৃণমূলের মঞ্চ থেকে তাঁদেরকেই তীব্র আক্রমণ করলেন রিমঝিম। বললেন, অভিষেকের এই লড়াইয়ে পাশে আছি। তবে রিমঝিমের এই অবস্থান বদলকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে দেখা গেল না বিজেপি নেতৃত্বকে। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, কবে এসেছিল, কবে গেল বলতে পারব না। আর বিজেপির আরেক সেলিব্রিটি মুখ, রিমঝিমের সহ অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের মন্তব্য, 'অনেকেই ছেড়ে চলে গেছেন রুজিরুটির জন্য...রিমঝিম দুবছর আগেই পার্টি ছেড়েছিলেন। নতুন কোম্পানির বসকে খুশি করতে তারা প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন।'
বঙ্গে বিজেপি যখন সম্ভাবনায় জ্বলজ্বল করছিল, তখন একই সঙ্গে এই দলে নাম লিখিয়েছিলেন কাঞ্চনা ও রিমঝিম। ইতিমধ্যেই ফেসবুক পোস্ট করে রাজনীতি থেকে সন্ন্য়াস নিয়েছেন কাঞ্চনা। রবিবার তৃণমূলের মঞ্চে এসে দল পাল্টালেন রিমঝিম। ১৯-এ ১৮ হয়ে একুশে ষোলোয়ানা সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল বাংলার গেরুয়া ব্রিগেড। রাজনীতিতে ক্ষমতার আকর্ষণ যে কত দুর্নিবার, বিজেপির উত্থানে সেটা ফের প্রত্যক্ষ করে বঙ্গবাসী। ২০১৪ সালে দিল্লিতে গেরুয়া শিবিরের ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে গ্ল্যামার জগতের একাংশে আলোড়ন তৈরি হয়। একুশের আগেই সেই জোয়ারে তৈরি হয় জোরাল চমক। উনিশের মাঝামাঝি, যা আছড়ে পড়ে বঙ্গ বিজেপিতে। '১৪-র সাফল্য়ের সঙ্গে সঙ্গে উঠে এসেছিল একগুচ্ছ নাম। জর্জ বেকার, পি সি সরকার, কুমার শানু, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, বাপি লাহিড়ি, নিমু ভৌমিক, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়-সহ আরও বেশ কিছুু পরিচিত মুখ। এদের মধ্যে নিমু ভৌমিক ও বাপি লাহিড়ি প্রয়াত হয়েছেন।
একমাত্র কুমার শানু ঘোষণা করে গেরুয়া সংস্রব ত্যাগ করেছেন। বাকিরা আনুষ্ঠানিকভাবে না ছাড়লেও, বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে এই মুখগুলোকে এখন আর দেখা যায় না। উনিশ ও একুশ, এই দুই দফায় বাংলার চলচ্চিত্র জগতের একঝাঁক মুখ ভিড় করেছিল বিজেপিতে। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই একুশের ভোটে লড়াইয়ের ময়দানেও নেমেছিলেন। একমাত্র হিরণ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া বাকিদের কপালে জোটে পরাজয়। তাঁরা নিজেরাও হেরেছেন, দলও ক্ষমতার স্বাদ পায়নি। এই পরিস্থিতিতে আবার গেরুয়া পতাকা ছেড়ে নিজের নিজের ডেরায় ফিরে যেতে শুরু করেন গ্ল্যামার জগতের তারকারা। ঘোষণা করেই দল ছাড়েন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।
বিজেপি তাঁকে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিল। বাকিরা সরে যেতে লাগলেন নীরবে। এই তালিকাটাও যথেষ্ট লম্বা। যশ দাশগুপ্ত, তনুশ্রী চক্রবর্তী, পায়েল সরকার, সৌমিলি ঘোষ বিশ্বাস, বনি সেনগুপ্ত। শুধু বিজেপি নয়, রাজনীতির বৃত্ত থেকেই তাঁরা আজ অদৃশ্য। লোকসভা ভোটের আর ছ'মাসও বাকি নেই। '২৪-এর ভোটে বিজেপি আদৌ '১৯-এর ফলাফল ধরে রাখতে পারবে কি? তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে একাংশের মধ্যে।
সম্ভাবনা যদি বাড়ে, হয়তো ফের ভিড় বাড়বে তারকা মুখের। সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে না পারলে খসে যাওয়া তারার তালিকায় যুক্ত হতে পারে আরও কিছু নাম। চড়াই-উতরাই সত্ত্বেও, এখনও গ্ল্যামার জগতের যে মুখগুলো গেরুয়া পতাকা আঁকড়ে ধরে আছেন, তাঁদের অন্যতম লকেট চট্টোপাধ্য়ায়, হিরণ চট্টোপাধ্যায়, পাপিয়া অধিকারী এবং রুদ্রনীল ঘোষের মতো অভিনেতারা, যাঁদের সামনে এখন চব্বিশের চ্য়ালেঞ্জ।