পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: মৃতের (dead) নামে ভুয়ো সরকারি নথি (fake government documents) তৈরি করে জমি (land fraud) হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তোলপাড় সল্টলেক (salt lake)। গ্রেফতার (arrest) অভিযুক্ত প্রোমোটার (promoter)। ভুয়ো দলিল তৈরি করে কোটি টাকার বিনিময়ে জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ধৃত সিদ্ধার্থ নাগ নামে ওই প্রোমোটারের বিরুদ্ধে। জালিয়াতি, প্রতারণা-সহ একাধিক ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ। চাওয়া হয়েছে হেফাজতও।


কী জানা গেল?
ঘটনার শুরু গত ১৩ অক্টোবর। মানিকতলা এলাকার বাসিন্দা প্রিয়জিৎ মিত্র হঠাতই বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ করেন যে তাঁর মামা পৃথ্বীশচন্দ্র বসুর 'বাড়ি' উধাও হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ শুনে চমকে ওঠে পুলিশ। বাড়ি উধাও? এও কি সম্ভব? তদন্ত শুরু হতেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরোতে থাকে। আসলে প্রিয়জিৎ জানিয়েছিলেন, সল্টলেকের সেক্টর ওয়ানের বি এ ব্লকের যেখানে তাঁর মামার বাড়ি ছিল, সেখানে হঠাতই  অন্য একটি বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না তিনি। প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসা করে প্রিয়জিৎ জানতে পারেন, সিদ্ধার্থ নাগ নামে এক ব্যক্তি বাড়িটি সুশীল জিন্দাল এবং শশী জিন্দাল নামে দুই ব্যক্তিকে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। এর পর বিধাননগর পুরনিগমে খোঁজ নেন প্রিয়জিৎ। সেখানে জানা যায়, সিদ্ধার্থ নাগ তাঁর পৃথ্বীশ চন্দ্র বসুর থেকে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাড়িটি কিনে নিয়েছিলেন। মাথায় হাত পড়ে প্রিয়জিতের। কারণ পৃথ্বীশ মারা গিয়েছেন ১৯৯৭ সালের ৩ জুলাই। সেক্ষেত্রে কী করে ২০২১ সালে তাঁর কাছ থেকে বাড়ি কেনা সম্ভব সিদ্ধার্থের? এর পরই প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে বিধাননগর উত্তর থানার দ্বারস্থ হন প্রিয়জিৎ। 


চমক পরতে পরতে...
পুলিশকে প্রিয়জিৎ জানিয়েছিলেন, পৃথ্বীশের থেকে বাড়ি 'কেনার' সূত্রে যে ডিড করা হয়েছিল তার প্রতিলিপিতে মৃতের প্যান কার্ড, আধার কার্ড সংযোজন করা রয়েছে। তাঁর দাবি, মামা মারা যাওয়ার সময় তাঁর নামে উইল করে দিয়ে যান। তবে সেই জমির মিউটেশন করিয়ে উঠতে পারেননি প্রিয়জিৎ। ২০০৭ সালের অগাস্টে প্রিয়জিতের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল পেশায় প্রোমোটার সিদ্ধার্থ নাগের। তিনি বি এ ব্লকের ওই বাড়ির নিচের তলায় থাকার জন্যে দীর্ঘমেয়াদি লিজ নিয়েছিলেন। সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জমির মিউটেশন করিয়ে দেবেন। প্রিয়জিতের অভিযোগ, এই কারণ দেখিয়েই বাড়িটির আসল দলিল তাঁর থেকে নিয়েছিলেন অভিযুক্ত। পরবর্তীতে জমির মিউটেশন করিয়ে দিলেও দলিলও ফেরত দেননি। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে সিদ্ধার্থ নাগ বাড়ির পৃথ্বীশের নামে ভুয়ো আধার কার্ড, প্যান কার্ড তৈরি করে জাল দলিল তৈরি করে প্রথমে নিজের নামে মালিকানা করেন। এর পরই সেই বাড়ি কোটি টাকার বিনিময় জিন্দালদের বিক্রি করে দেয়। পুলিশের দাবি, এই ধরনের প্রচুর অবৈধ ঘটনার সঙ্গে আগেও নাম জড়িয়েছিল সিদ্ধার্থের। তবে ওই ব্যক্তির সঙ্গে আর কাদের যোগ রয়েছে জানতে তদন্ত শুরু করেছে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ।