গঙ্গাসাগর: আসছে মকর সংক্রান্তি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে গঙ্গাসাগরে পুণ্য়স্নান করতে ভিড় করছেন মানুষজন। আউট্রাম ঘাটের ট্রানসিট ক্য়াম্পেও উপচে পড়া ভিড়। সাধু সন্ত থেকে শুরু করে পুণ্য়ার্থীরা এসেছেন। এখান থেকেই বাসে করে গঙ্গাসাগরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তাঁরা। আউট্রাম ঘাটের পাশেই ক্যাম্পে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে মেডিক্যাল ক্য়াম্পও।


রবিবার থেকে শুরু হতে চলেছে গঙ্গাসাগর মেলা। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মেলা চত্বরকে মুড়ে ফেলা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ারে। বাবুঘাট থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত বসানো হয়েছে এগারশো সিসি ক্যামেরা। ড্রোনের সাহায্যে আকাশপথে ও স্পিড বোটের সাহায্যে জলপথেও চলবে নজরদারি। প্রশাসন সূত্রে খবর, এবারই প্রথম গঙ্গাসাগরে আসা পুণ্যার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের বিশেষ শংসাপত্র। 


যতদূর চোখ যায় সাধুসন্ত-পুণ্যার্থীদের ভিড়। হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যেও জলে ডুব দিয়ে পুণ্য় সঞ্চয়। সাগর মেলা মানেই এই চেনা ছবি। ৮ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত হবে গঙ্গাসাগর মেলা। রবিবার থেকে মেলা শুরু হলেও, পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে। 


বাবুঘাট থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত বসানো হয়েছে এগারশো সিসি ক্যামেরা। ড্রোনের সাহায্যে আকাশপথে ও স্পিড বোটের সাহায্যে জলপথে থাকছে নজরদারির ব্যবস্থা। মেলা চত্বরে থাকছে হাইটেক মেগা কন্ট্রোল রুম, যেখানে ৫২টি LED টিভি ও ১টি সুবিশাল LED স্ক্রিনের মাধ্যমে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হবে।


এ ছাড়াও মেলা চত্বরে থাকা ওয়াচ টাওয়ারের সাহায্যে ভিড়ের ওপর নজরদারি চালানো হবে। প্রশাসন সূত্রে খবর, গঙ্গাসাগার মেলায় পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য ২ হাজার ৭৫০টি বাস, ৩২টি ভেসেল, ১০০টি লঞ্চ, ২১টি জেটি, ৪টি বার্জের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বারাণসীর ধাঁচে এবার গঙ্গাসাগর মেলাতেও থাকছে বিশেষ আরতির ব্য়বস্থা।
তার জন্য তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ মঞ্চও।


মেলার প্রস্তুতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গিয়ে বুধবারই সাগরদ্বীপে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা হিসেবে ঘোষণার দাবি তোলেন তিনি। প্রশাসন সূত্রে খবর, এবারই প্রথম গঙ্গাসাগরে আসা পুণ্যার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের বিশেষ শংসাপত্র।


চলতি মাসের ৪ তারিখে গঙ্গাসাগর গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর। দুপুরে হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের হেলিপ্যাড থেকে কপ্টারে চড়ে রওনা দেন তিনি। ডুমুরজলার আদলে সাগরে তৈরি হয়েছে নতুন হেলিপ্যাড। অবতরণের পর হেলিপ্যাডের উদ্বোধন করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন একাধিক কর্মসূচি ছিল তাঁর। গঙ্গাসাগরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি, কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন মুখ্যমন্ত্রী। মেলা প্রাঙ্গণের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার ফাঁকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন।


সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাতেও গঙ্গাসাগরে চলেছিল যাত্রী পারাপার। গত ১০ জানুয়ারি ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ৬টি লঞ্চ নামখানা ঘাট থেকে পুণ্যার্থীদের নিয়ে পৌঁছয় সাগরের বেণুবন পয়েন্টের চেমাগুড়িতে। যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়মে সন্ধের পর লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর কারণ, নামখানা থেকে চেমাগুড়ি যাওয়ার পথে, হাতানিয়া- দোয়ানিয়া নদী ও বঙ্গোপসাগরে একাধিক চড়া রয়েছে। সেই চড়ায় লেগে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল। সরকারি নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে কীভাবে রাতে লঞ্চ পারাপার চলল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন সুন্দরবনের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।