কলকাতা: গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যপাল। রাজভবন সূত্রে খবর, উপাচার্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। ২৫ অগাস্ট গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ছিল। উপাচার্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায় সমাবর্তন আয়োজন করতে না পারায় তাঁর বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি, কর্তব্য পালনে ব্যর্থতা এবং নির্দিষ্ট সময়ে সমাবর্তন করতে না পারা। রাজভবন সূত্রে খবর এই ৩ অভিযোগে, মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিলেন আচার্য, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। অন্যদিকে, এ নিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হল উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে। ফলে ১ বছরের মাথায়, অন্তর্বর্তী উপাচার্যের অপসারণ ঘিরে ফের টানাপোড়েন শুরু হওয়ায়, রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সংঘাতের আবহ তৈরি হল! বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হল অচলাবস্থা। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের তরফে অপসারণের ইমেল অন্তর্বর্তী উপাচার্যের কাছে পৌঁছেছে। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "উপাচার্য সকালবেলা আমার কাছে সেই মেলটা ফরোয়ার্ড করেন এবং বলেন তাঁর কাছে আর ফাইল না পাঠাতে। আমি উচ্চশিক্ষা দফতরে জানিয়েছি বিষয়টা। তারা আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন।'' সূত্রের খবর, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স কমিটির বৈঠকে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তাতে বয়েজ ও গার্লস হস্টেল এবং ল্যাঙ্গুয়েজ বিল্ডিংয়ে সিসিটিভি বসাতে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। সূত্রের দাবি, সেক্ষেত্রে এক একটি সিসি ক্যামেরা ইনস্টলের খরচ পড়েছে গড়ে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩২৮ টাকা। এছাড়াও লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN-এর জন্য খরচ করা হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। সূত্রের আরও দাবি, দুটি ক্ষেত্রেই বরাত পেয়েছে একই কোম্পানি। এখানেই উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। এই প্রেক্ষাপটে রাজভবন সূত্রে দাবি, বর্তমান অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগও তোলা হয়েছে। এই অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বক্তব্য, নিয়ম মেনেই সব কাজ হয়েছে। তার নথি রাজ্য সরকার, উচ্চশিক্ষা দফতরে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতে চাইলে, স্বাগত। তিনি বলেন, কিছু মানুষ ভুল তথ্য প্রচার করে বাজার গরম করতে চাইছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্যপালের দফতর থেকে ২৫ অগাস্ট সমাবর্তনের তারিখ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। আর তার ১ দিন পরেই রাজ্যপালের এ হেন সিদ্ধান্ত।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরানো নিয়ে বিবাদ এই প্রথম নয়। বছর খানেক আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রজতকিশোর দে-কে সরানো নিয়ে সংঘাতে জড়ায় নবান্ন ও রাজভবন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বলেন, "এই ধরনের সমস্যা এর আগেও হয়েছিল রজত কিশোর দে-র সময়। তখন রাজ্য সরকার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অধ্যাপক রজত কিশোর দে-কে রাজ্য সরকার পুনর্বহাল করেছিলেন। রজত কিশোর দে তারপরেও কিছুদিন কাজ চালিয়ে গেছেন।''