সন্দীপ সরকার, আশাবুল হোসেন ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : সারা রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে যাবতীয়  অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করতে চলছে বিরাট আন্দোলন। অনশনের প্রায় ২ সপ্তাহ পার করে, রাজ্য সরকারকে ঝাঁঝালো বার্তা দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের ১০ দফা দাবির মূল উদ্দেশ্যই হল রোগীস্বার্থ সুনিশ্চিত করা। আর এরই মধ্যে হাঁপানি, গ্লকোমা, থ্যালাসেমিয়া, যক্ষ্মা ও মানসিক অসুস্থতার ওষুধ-সহ আটটি জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম একধাক্কায় বাড়ানো হল। একেবারে পঞ্চাশ শতাংশ দাম বাড়ল । কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যদি কোনও ওষুধের দাম একশো টাকা হয়, সেটাই এখন কিনতে হবে দেড়শো টাকায়! এই পরিস্থিতিতে বাংলার চিকিৎসকদের নিশানায় রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়ই। অন্যদিকে আবার তৃণমূল প্রশ্ন তুলছে, ডাক্তারদের আন্দোলন থেকে কেউ এই ওষুধরে দাম বাড়ানো নিয়ে একটিও শব্দ খরচ করছে না কেন ? 


সম্প্রতি, ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিকাল প্রাইসিং অথরিটি বা এনপিপিএ-র তরফে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, খরচ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় ওষুধগুলি তৈরিতে সমস্যা হচ্ছিল। ওই আটটি ওষুধ যাতে বাজারে সব সময় পাওয়া যায়, সেই বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই দাম বাড়ানো হয়েছে। যেমন - যে ওষুধগুলোর দাম বাড়ানো হবে তা হল,বেনজ়াইল পেনিসিলিন ইনজেকশন, অ্যাট্রোপিন ইনজেকশন (০.৬ মিলিগ্রাম), স্ট্রেপটোমাইসিন ইনজেকশন (৭৫০ মিলিগ্রাম ও ১০০০ মিলিগ্রাম), স্যালবুটামল ট্যাবলেট ও রেসপিরেটর, পাইলোকারপিন, সেফাড্রক্সিল ট্যাবলেট (৫০০ মিলিগ্রাম),ডেসফেরিওক্সামিন ইনজেকশন, লিথিয়াম ট্যাবলেট (৩০০ মিলিগ্রাম)। 


এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী জানালেন, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের উপর বোঝা বাড়াবে। ওষুধের দাম বৃদ্ধি মানে , সাধারণ মানুষের পকেটে টান পড়া, যেখানে সরকারের দায়িত্ব মানুষের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো পৌঁছে দেওয়া, সেখানে সরকার, শিল্পের কাছে মাথা নত করছে। তাের সামনে রাস্তা খুলে দিচ্ছে, যাতে তারা যেমন খুশি পয়সা নিতে পারে। 


চিকিৎসক নীলাঞ্জন চন্দ্র জানালেন, এটা একটা বড় ধাক্কা। এদিকে মানুষের আয় সেভাবে বাড়ছে না, অন্যদিকে ওষুধের দাম বাড়ছে। এগুলো খুবই 'কমন' ওষুধ, গুরুত্বপূর্ণও।  


০১৯ ও ২০২১ সালে একইভাবে প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছিল বহু ওষুধের। এর পর ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রায় ৮০০টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। এবার অক্টোবরে একধাক্কায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হল ৮ জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম।  রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, গোটাটাই কি সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা?  


তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ প্রশ্ন তুলেছেন,  অত্যন্ত আপত্তিকর ভাবে জীবনদায়ী ওষুধের দাম পঞ্চাশ শতাংশ বেড়েছে। কার্যত প্রতি পরিবারেই এই ওষুধগুলি লাগে। সেই ওষুধগুলোর দাম পঞ্চাশ শতাংশ বেড়ে গেছে। তাহলে , ডাক্তারদের আন্দোলন থেকে এই বিষয়ে একটিও কথা শোনা গেল না কেন !


উত্তরে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসজ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, যে জীবনদায়ী ওষুধের দাম বেড়েছে, সেগুলির দাম আন্তর্জাতিক স্তরে বেড়েছে। সেগুলোর ওপর তো নিয়ন্ত্রণ তো সরকারের থাকে না ! 


সাধারণের সুরাহা তো দূরের কথা, উল্টে তাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়াটাই এখন যে কোনও সরকারের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?  


আরও পড়ুন : 
কালীপুজোর আগেই ফের ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব? কবে, কোথায় আছড়ে পড়বে 'ডানা'?