বিটন চক্রবর্তী, হলদিয়া: বিদ্যাসাগরের জেলাতে সেই 'ঈশ্বর'সুলভ কাজই করে নজির গড়লেন হলদিয়ার বিজ্ঞান কর্মী নকুল ঘাঁটি। পথ দুর্ঘটনায় ছেলেকে হারিয়েছেন। বাড়িতে তখন শোকে মুহ্যমান ছেলের স্ত্রী ও ছোট নাতি। পুত্রশোকে শোকস্তব্ধ তিনিও। কিন্তু বিজ্ঞান ও বিদ্যাসাগরের ভাবনাকে কেবল পুঁথিগত করে না রেখে তা বাস্তব জীবনেও করে দেখালেন নকুলবাবু। বৌমাকে নিজের মেয়ে মনে করেই বিয়ে দিলেন। 



এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই। জানা গিয়েছে, ২০২০-এর ২০ অক্টোবর পথ দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয় হলদিয়ার সুতাহাটার বাসিন্দা অর্ণব ঘাঁটির। অর্ণবের বাবা পেশায় পুলকার চালক নকুল ঘাঁটি একজন বিজ্ঞান কর্মীও। তিনি বলেন, ছেলে মারা যাওয়ার পর পুত্রবধূ শুভ্রা তাঁদের সেই শোক ভুলিয়ে একই সঙ্গে বাবা-মা'র প্রতি সন্তান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু চেতনা ও বিবেক এই দুইয়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।  


কন্যাসম বৌমা ও তাঁর বছর দু'য়েকের নাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে বৌমার আবার নতুন করে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শুভ্রার শ্বশুর নকুল ঘাঁটি। যদিও প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না শুভ্রা। এরপর অনেক বুঝিয়ে তিনি রাজি করান শুভ্রাকে। নতুন বছর ২০২২-এর জানুয়ারি মাসের শেষ দিনটি ঘাঁটি পরিবারের পুত্রবধূ শুভ্রার কাছে ফের নতুন বার্তা নিয়ে আসে। বিজ্ঞান কর্মী শুভ্রার শ্বশুর নকুলবাবু এদিন নিজের বাড়িতে বৌমার মালাবদল করিয়ে নতুন করে চারহাত এক করিয়ে দেন।


রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রচলনের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েই এই কাজ জানালেন নকুলবাবু। এদিকে, নতুনভাবে জীবন শুরু করতে পেরে খুশি শুভ্রা। তবে এর জন্য শ্বশুরমশাইকে কৃতজ্ঞতা নয়, বাবা হিসেবে মেয়ের প্রতি যা কর্তব্য, তাই তিনি করেছেন বলে মনে করেন শুভ্রা। আর শুভ্রার নতুন জীবন সঙ্গী হলদিয়ার বেসরকারি সংস্থার কর্মী মধুসূদন সাঁতরার বক্তব্য,  বিদ্যাসাগর যেখানে বিধবা বিবাহ প্রচলন করে গিয়েছিলেন, সেখানে আমাদের মত যুব সমাজ যদি এগিয়ে না আসে তাহলে তা শুধু ইতিহাসের পাতাতেই থেকে যাবে।


এদিন নিয়ম মেনে অতিথি আপ্যায়নেরও ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। ছিল খাওয়া দাওয়ারও আয়োজন। প্রতিবেশী থেকে আগত অভ্যাগতরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সকলেই।