কলকাতা: শহর কলকাতার আকাশে সূর্যশোভা। মঙ্গলবার সকালে কলকাতার আকাশে সূর্যের চারদিকে তৈরি হয়েছে আলোর বলয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্ষাকালে সিরাস মেঘ তৈরি হয়। এই মেঘের মধ্যেই থাকে ষড়ভূজাকৃতি জলকণা। এই ষড়ভূজাকৃতি জলকণার মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলো গিয়ে ২২ ডিগ্রি হেলে গিয়ে তৈরি করে এই সূর্যশোভা। (Halo Around Sun in Kolkata)


এ নিয়ে এবিপি আনন্দে মুখ খোলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারী। তিনি বলেন, "সূর্যের এই শোভা বা আলোর বলয় সৃষ্টি হয় যখন আকাশে জলভরা মেঘ থাকে। এই মেঘকে বলা হয় সিরাস মেঘ। এদের মধ্যে জলীয় বাষ্প রয়েছে যেমন, তেমনই বরফের কুচি রয়েছে, যা ষড়ভুজাকৃতির হয়। এর মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হলে সূর্যকে ঘিরে ওই বলয় দেখতে পাই আমরা। শুধু সূর্য নয়, চাঁদের চারিদিকেও এমন বলয় চোখে পড়ে, বাচ্চাদের আমরা চাঁদের সভা বসেছে বলি।" (Kolkata News)


সূর্য এবং চাঁদকে ঘিরে তৈরি হওয়া আলোর বলয় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা কম হয়নি। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির Earth And Environmental Engineering বিভাগের গবেষক কারা ল্যাম্ব জানান, বায়ুণ্ডলের উপরে ভাসমান বরফের স্ফটিক বৃত্তাকারে জমা হয়ে ওই বলয়ের সৃষ্টি। তার উপর আলো পড়ে প্রতিসরণ ঘটে, যার ফলে ওই বলয়কে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয় আমাদের চোখে। গোটাটাই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।


আরও পড়ুন: Cave on Moon: মানুষের আদিম আশ্রয়, চাঁদের বুকেও এবার গুহার খোঁজ মিলল


এর যে বিশদ ব্যাখ্যা মেলে, তা হল, মাটি থেকে ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়, বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বরফের মেঘের মধ্যে জমা হয়। বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে বরফের মেঘ তৈরি হয় বলে, তার আস্তরণও হয় পাতলা। খালি চোখে অনেক সময় দেখাই যায় না। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে বরফের ওই মেঘের রাশি বিরাজ করে। সেখান থেকেই ওই বলয়ের সৃষ্টি।


তবে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকেই দেখা হোক না কেন, সেই সময় আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন, ওই জ্যোতির্বলয়ের আকার সমান হয় বলে মত বিজ্ঞানীদের। তবে জ্যোতির্বলয় তৈরি হয় যে বরফের স্ফটিক জমে, সেই বরফের স্ফটিকগুলি আকারে ষড়ভুজ হয়। কখনও কখনও এই জ্যোতির্বলয়ের প্রস্থ হয় ২২ ডিগ্রি, কখনও আবার ৪৬ ডিগ্রি।


এ নিয়ে নানা লোককথাও প্রচলিত রয়েছে। কিছু দেশে ওই জ্যোতির্বলয়কে দুর্যোগের ইঙ্গিত বলে ধরা হয়। বিজ্ঞান যদিও এই যুক্তি মানে না। চাঁদের চারিদিকে এমম বলয় চোখে পড়ে অহরহ। অন্য গ্রহের চারপাশেও এমন জ্যোতির্বলয় তৈরি হয়। সূর্য এতটাই উজ্জ্বল যে তাকে ঘিরে থাকা জ্যোতির্বলয় সচরাচর চোখে পড়ে না। ফলে এদিন বিরল দৃশ্যেরই সাক্ষী থাকল মহানগর।