সন্দীপ সরকার, কলকাতা: নিয়ম মেনে লেখা হচ্ছে না প্রেসক্রিপশন। সরকারি চিকিৎসকদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য ভবন। সরকারি ডাক্তারদের এই আচরণ আর বরদাস্ত করা হবে না। নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে, CMOH এবং হাসপাতাল সুপার দের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।

Continues below advertisement

প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক নাম লেখার পরিবর্তে যথেচ্ছভাবে লেখা হচ্ছে ওষুধের ব্র্যান্ড নেম। প্রেসক্রিপশন পড়ে বোঝাই যাচ্ছে না রোগীর কী অসুখ হয়েছে। রোগীর শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কিত তথ্য অনেক সময়ই লেখা থাকছে না প্রেসক্রিপশনে। সরকারি চিকিৎসকদের লেখা প্রেসক্রিপশন নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য ভবন। বার বার নির্দেশ দেওয়া সত্বেও কেন নিয়ম মানা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ স্বাস্থ্য দফতর।

গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মেডিক্যাল কলেজ-- রাজ্যের সমস্থ স্বাস্থ্য পরিষেবাকেন্দ্রে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসক্রিপশনে থাকছে না ডাক্তারের নাম এবং স্বাক্ষর। ফলে রোগীকে কোন ডাক্তার দেখেছেন, তাঁর পরিচয় জানা যাচ্ছে না। কতদিন, কী ডোজে ওষুধ খেতে হবে? কতদিন ধরে চিকিৎসা চলছে? রোগীকে কী করতে হবে? এসবের উল্লেখ নেই। দীর্ঘদিন ধরে চলা চিকিৎসার ক্ষেত্রে, প্রেসক্রিপশনে দায়সারা ভাবে লেখা হচ্ছে 'CONTINUE ALL'।

Continues below advertisement

গত ৬ মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে প্রেসক্রিপশন অডিট চালানো হয়। আর তাতেই এইসব বেনিয়ম উঠে এসেছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর। স্বাস্থ্য ভবনের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকের হাতের লেখা দুর্বোধ্য, পাঠের অযোগ্য। সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওষুধের নাম ক্যাপিটাল লেটারে লেখা হচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের হুঁশিয়ারি, সরকারি ডাক্তারদের এই আচরণ আর বরদাস্ত করা হবে না। ডাক্তারদের নিজেদেরকে সংশোধন করতে, স্বচ্ছতা আনতে এবং দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে। 

নির্দেশে বলা হয়েছে, স্পষ্ট ক্যাপিটাল লেটারে লিখতে হবে প্রেসক্রিপশন। ব্র্যান্ড নেম নয়, লিখতে হবে ওষুধের জেনেরিক নাম। প্রেসক্রিপশনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে রোগীর কী অসুখ হয়েছে। এবং কোন চিকিৎসক তাঁকে দেখছেন। প্রত্যেকটি ওষুধের ডোজ, কতদিন, কতবার, কীভাবে খেতে হবে, তা সহজভাবে লিখে দিতে হবে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের তরফে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কাছে এবিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং হাওড়া জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছিল কোলে মেডিক্যাল এজেন্সি। এই সংস্থা রাজ্যের অন্তত কুড়িটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালায়। এই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মেডিক্যাল কলেজ--- রাজ্যের সর্বত্র, সব সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের মেনে চলতে হবে এই নিয়ম। সরকারি নির্দেশ কার্যকর করে স্বাস্থ্য ভবনকে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে। নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে, সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং হাসপাতাল সুপার দের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।