সুনীত হালদার, হাওড়া: প্রবল তাপপ্রবাহের কবলে গোটা দক্ষিণবঙ্গ। গত ৫০ বছরে এপ্রিল মাসে কলকাতায় এত দীর্ঘস্থায়ী গরম দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন আবহবিদরা। কলকাতা-হাওড়া কার্যত পুড়ছে। প্রবল গরমে শুধু মানুষ নয়, শিকার হচ্ছে পশুরাও। তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ দেখা গেল ঘুষুড়িতে। রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ছিটকে পড়ল একটি ঘোড়া। পাশাপাশি অসুস্থ প্রাণীটিকে সুস্থ করতে স্থানীয়দের ঝাঁপিয়ে পড়ার মানবিক ছবিও দেখা গেল।

  


কলকাতার হেস্টিংসে ফ্লাইওভারের তলায় সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঘোড়া এবং ঘোড়ার গাড়ি। ওই ঘোড়াগুলি পর্যটকদের নিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আশপাশে ঘোরে। বিভিন্ন বিয়ে বাড়ি এবং নানা ধরনের অনুষ্ঠানেও এই ঘোড়াগুলিকে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার সকালে হনুমান জয়ন্তি উপলক্ষে হুগলির রিষড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আট বছরের একটি ঘোড়াকে- তার নাম রাজু। মালিক প্রবাল মুখোপাধ্যায় রবিবারই মালিক এই প্রখর গরমে রাজুকে হেস্টিংস থেকে রিষড়া পর্যন্ত হাঁটিয়ে নিয়ে যান। অনুষ্ঠান শেষে দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে ঘুসুড়ির জিটি রোডে ভরদুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ঘোড়াটি।  


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ছুটতে ছুটতে ঘোড়াটি রাস্তায় পড়ে যায়। তারপরে আর ওঠার ক্ষমতা ছিল না। প্রায় চার ঘণ্টা ওভাবেই রাস্তায় পড়েছিল ঘোড়াটি। পথচারীদের বেশিরভাগই পাশ কাটিয়ে চলে যান। এরই মধ্যে ঘোড়াটিকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে এলাকার কয়েকজন যুবক ছুটে আসেন। তাঁরাই বালতি বালতি জল এনে ঘোড়াটিকে স্নান করান। তাতে সামান্য ঠান্ডা হয় ঘোড়াটির দেহ। বোতলে করে পরম যত্নে জল খাওয়ানো হয় অসুস্থ ঘোড়াটিকে। ঘোড়ার মালিক প্রবাল মুখোপাধ্যায় ওষুধ দেন। সেই ওষুধও খাইয়ে দেন যুবকরা। এরপর ধীরে ধীরে সুস্থ হয় ঘোড়াটি। বেশ কিছুক্ষণ পরে ঘোড়াটি নিজের পায়ে দাঁড়ালে টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালের সবুজ মাঠে ছেড়ে রাখা হয়। ঘোড়ার মালিক প্রবাল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বছর আটেক আগে বিহারের শোনপুর পশু মেলা থেকে রাজুকে কিনে নিয়ে আসেন তিনি। গত ২৫ বছর ধরে তিনি ঘোড়া এবং ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসা করেন হেস্টিংস এলাকায়। তাঁর আটটা ঘোড়া রয়েছে। এছাড়াও তিনটি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে যা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কাছে খাটে। প্রবাল বলছেন, 'দুপুর একটা নাগাদ গরমের কারণে  ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। জল এবং ওষুধ খাওয়ালে ঘোড়াটি উঠে দাঁড়ায়।' স্থানীয় যুবকরা সাহায্য করায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। রাতের দিকে তাপমাত্রা কমলে তিনি গাড়িতে চাপিয়ে ঘোড়াটিকে তাঁর ডেরায় নিয়ে যাবেন। 


যদিও ঘোড়ার অসুস্থতার জন্য স্থানীয় কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঘোড়ার মালিকের বিরুদ্ধেই। স্থানীয় যুবক বিকাশ তিওয়াড়ির অভিযোগ। এত গরমে কড়া রোদের মধ্যে এতটা পথ গিয়ে আবার ফেরত আসতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছে ঘোড়াটি। ঘোড়াটিকে ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয় না বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও প্রবালের দাবি, দেখভাল করা হয়। গরমেই এমনটা হয়েছে। রাতে ঘরে ফিরে গিয়ে চিকিৎসক দেখানো হবে রাজুকে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: 'ভর্তুকিতে শিক্ষা পেয়েছি, দেশকে ফেরানোটাও দায়িত্ব', বললেন UPSC-সফল গৌতম