সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে স্বস্তি পেলেন প্রাথমিকের পার্শ্ব শিক্ষকরা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ (Primary Teacher Recruitment) প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না উচ্চপ্রাথমিকের পার্শ্ব শিক্ষকরা। উচ্চপ্রাথমিকের পার্শ্ব শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায়।


বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় খারিজ করে জানিয়ে দিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ (High Court Division Bench)। নিয়ম অনুযায়ী উচ্চপ্রাথমিকের পার্শ্ব শিক্ষকরা শুধুমাত্র উচ্চপ্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই অংশ নিতে পারেন। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন শুধুমাত্র প্রাথমিকের পার্শ্ব শিক্ষকরা। ২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন উচ্চপ্রাথমিকের (Upper Primary) পার্শ্ব শিক্ষকদের একাংশ। 


সেই মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রায় দিয়েছিলেন, উচ্চপ্রাথমিকের পার্শ্ব শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। সেই রায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রাথমিকের পার্শ্বশিক্ষকরা ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। তাঁদের মামলার প্রেক্ষিতে বুধবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় খারিজ করে দিল বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। 


ফলে, উচ্চপ্রাথমিকের পার্শ্ব শিক্ষকরা আপাতত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। যার ফলে স্বস্তিতে প্রাথমিকের পার্শ্ব শিক্ষকরা।


শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। বছরখানেক ধরে তোলপাড় রাজ্য। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে, ইতিমধ্য়েই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী-সহ একাধিক বিধায়ক। গ্রেফতার হয়েছেন আরও অনেকে। SSC, টেট থেকে শুরু করে শিক্ষক বদলি নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 


এর আগে জুলাইয়ের একেবারে শেষ দিকে প্রাথমিকের ২০২২ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। 'পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ।' এমনই নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ। ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছিল, টেট উত্তীর্ণ যেসব প্রার্থী ২০২০-২২ সালে D.El.Ed প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পর্ষদের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন সৌমেন পাল-সহ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, যেখানে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীরা রয়েছেন, সেখানে কেন প্রশিক্ষণরত প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হবে? কিন্তু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।


সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন মামলাকারীরা। শুনানির পর, সেই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ করে দেয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। যার অর্থ হল, প্রশিক্ষণরত D.El.Ed প্রার্থীরা প্রাথমিকের চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর অংশগ্রহণ নিতে পারবেন না। এরপর প্রশিক্ষণরত প্রার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেই মামলার প্রেক্ষিতে এবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করল দেশের শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ।


আরও পড়ুন:  আরও ১০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন, রিপোর্ট দিতে সময় চাইল যাদবপুরের অভ্যন্তরীণ কমিটি