গৌতম মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে কল-কারখানায় যন্ত্রদেবতা বিশ্বকর্মার আরাধনা হয়। আর সেদিনই বাংলার ঘরে ঘরে রান্না পুজো। এদিন উনুনে আঁচ পড়ে না। ইদানীং গ্যাস আভেনও জ্বালানো হয় না। পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিদের ঘরে ঘরে অরন্ধন উৎসব পালন হয় এদিন। অরন্ধনে বাসি পান্তার সঙ্গে ইলিশ মাছ খাওয়ার রীতি আছে।  ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে মা মনসার পুজোতে নৈবেদ্য  হিসেবে থাকে পান্তাভাত, হরেক রকম সবজি ভাজা এবং ইলিশের নানা পদ।


প্রতিবছর ভাদ্র সংক্রান্তিতে ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। এবারও বাজারে বাজারে ইলিশের খোঁজ করছেন ক্রেতারা। কিন্তু টানা খারাপ আবহাওয়া ও অমাবস্যার কোটালের জেরে সমুদ্র উত্তাল। যার জেরে গত বুধবার থেকে গভীর সমুদ্রে যেতে মৎস্যজীবীদের নিষেধাজ্ঞা আছে। অনেকেই আবার দুর্যোগের খবর পেয়ে সমুদ্র থেকে খালি ট্রলার নিয়ে ফিরে এসেছে ঘাটে।


এ রাজ্যের ইলিশের সিংহভাগ জোগান দেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা। কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা, সাগর, কুলতলির ঘাটে ঘাটে ট্রলারের সারি। রান্না পুজোয় ইলিশ মিলবে না বলে আক্ষেপ হাহুতাশ মৎস্যজীবীদের। লোকসানের মুখে মৎস্যজীবীরা। আড়তদার থেকে মাছ বিক্রেতা সকলেই জানালেন, ইলিশের আকাল। যোগান কম। ফলে দাম আকাশছোঁয়া। ফলে সোমবার রান্নাপুজো আর বিশ্বকর্মা পুজোয় অতিথিদের পাতে ইলিশের পদ তুলে দিতে পকেটে টান পড়তে পারে আম বাঙালির।  


রন্ধনের রীতি হল, সংক্রান্তির আগের দিন সারা সন্ধে ধরে নানারকম রান্না হয়। ভোরের আগে শেষ হয় রান্না। এরপর রন্ধনস্থলে ফুটফুটে সাদা শাপলা ফুলের মালা দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে পুজো করা হয়। এদিন আগুন জ্বলে না বাড়িতে। আগের দিন রান্না করে রাখা খাবার খাওয়াই রীতি। আর এই উৎসবেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল ইলিশ। সেই ইলিশের জোগান না থাকলে বাঙালির উৎসবই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। 


শারদোৎসবের সূচনা হয় বিশ্বকর্মা পুজোয়। কিন্তু মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গাকে ঘরের মেয়ে উমা করে নেওয়ার যে উৎসব, তার সূচনা নিশ্চিত এই গৃহিণীদের লোকাচার অরন্ধনেই। আর সেখানে যদি ইলিশ না থাকে, তাহলে উৎসবের আনন্দ কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে তো যাবেই। তাই শেষ বেলাতেও বাঙালির মন বাজারের দিকে। যদি সস্তায় একটু ইলিশ মেলে। 


আরও পড়ুন :


গণেশ পুজোর আগে ঘরে আনুন সমৃদ্ধির চিহ্ন সোনা, জানুন বাংলার বাজারে কত হল দর ?