সন্দীপ সরকার, কলকাতা: আবার একটা জানুয়ারি। আবার একটা ভাইরাসের সংক্রমণ। ফের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে চিনের পরিস্থিতি। HMP বা হিউম্য়ান মেটানিউমো ভাইরাসের সংক্রমণ তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে, ঠিক চার বছর আগের একটা ভয়ঙ্কর অধ্য়ায়ের কথা। করোনা-কাল। ২০২০ সালে থাবা বসানো করোনা, বিশ্বের অনেক দেশের মতো, ভারতকেও ছারখার করে দিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মৃত্য়ু। দিনের পর দিন লকডাউন। রোজগার হারানো, স্বজন হারানোর যন্ত্রণা, দুর্বিসহ করে তুলেছিল জীবন। মাত্র চার বছর আগের সেই সব ছবিগুলো এখনও সবার স্মৃতিতে টাটকা। সেই করোনা ভাইরাসের সঙ্গে HMP ভাইরাসের বেশ কয়েকটি মিল সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। কী করে করবেন HMP ভাইরাসের সঙ্গে কোভিডের পার্থক্য ? এবিষয় নিয়ে এবিপি আনন্দকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অমিতাভ সাহা।
এদিন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অমিতাভ সাহা বললেন, 'অন্য যে ভাইরাসগুলি, সাধারণভাবে আমাদের ঋতু পরিবর্তনে হয়, এবারেও একই উপসর্গ। কোনও নির্দিষ্ট কোনও যে উপসর্গ আছে, যেটা আমরা কোভিডে দেখেছিলাম, যে আক্রান্তরা গন্ধ পাচ্ছিলেন না। সেটা এইক্ষেত্রে হয় না। কিংবা ধরো, আমরা যখন কোভিডে দেখেছিলাম, খুব শ্বাসনালির সংক্রমণ নিয়ে এসেছিল, তখন আমরা হ্যাপি হাইপ্রক্সিয়া বলে একটা জিনিস খুব বলছিলাম সেই সময়। যে রোগীর অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, কিন্তু রোগী বুঝতে পারছেন না। সেগুলির কিছুটা পার্থক্য আছে এই ভাইরাসের সঙ্গে।'
COVID-19 বা করোনা ভাইরাসও ছড়াতে শুরু করেছিল চিন থেকে। এবারও HMP ভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে চিনে। ভারতে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সময়টাও এক। ভারতে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল জানুয়ারি মাস থেকেই। ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি, ভারতে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল। HMP ভাইরাসের সংক্রমণও সামনে আসতে শুরু করল সেই জানুয়ারি মাসেই। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের সঙ্গে HMP ভাইরাসের আরও বেশ কিছু মিলও রয়েছে।
করোনা সংক্রমণ মূলত ছড়াত আপার রেসপিরেটরি ট্র্য়াকে অর্থাৎ শ্বাসনালীতে।HMP ভাইরাসের সংক্রমণও ছড়াচ্ছে সেখানেই। করোনা ভাইরাসের উপসর্গ ছিল জ্বর। HMP ভাইরাসের সংক্রমণেও জ্বর আসছে। তবে করোনার ক্ষেত্রে আক্রান্তদের স্বাদ-গন্ধ চলে যেত। এক্ষেত্রে তেমন কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।করোনা ভাইরাস হাঁচি, কাশির মাধ্য়মে ছড়াত। চিকিৎসকরা বলছেন, HMP ভাইরাসও হাঁচি-কাশির মাধ্য়মে ছড়াতে পারে। অন্য় রোগে আক্রান্ত, অর্থাৎ যাঁদের কোমর্বিডিটি আছে, করোনার ক্ষেত্রে তাঁদের ঝুঁকি ছিল সবচেয়ে বেশি। HMP-র ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই।
আরও পড়ুন, বাঘের আতঙ্কে লাল সতর্কতা জারি ! মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় ওড়িশা সরকার, 'এবার আমরা পারব না, ওরা উদ্ধার করুক..'
তবে আশার কথা হল, চিকিৎসকরা বলছেন, এই ভাইরাস কোভিডের মতো অজানা কিংবা নতুন নয়।এই ভাইরাস পূর্বপরিচিত। শীতকালে বিভিন্ন দেশে যে সব ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে, এইচএমপিভি তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে শিশুদের এবং যাঁদের ক্রনিক অসুখ আছে বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ চিন্তার বিষয় হতে পারে। তাই HMP ভাইরাস কি আগামী দিনে করোনার মতো মারাত্মক চেহারা নিতে পারে? নাকি যা রটছে, তা আসলে ভয় দেখানোর ব্য়বসা? তা আগামী দিনেই স্পষ্ট হবে।