সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি :  আষাঢ় মানেই রথযাত্রা।  বারো মাসে তেরো পার্বণের এক গুরুত্বপূর্ণ পার্বণ। রথযাত্রার চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় এই স্নানযাত্রার দিন। আজ, বুধবার জগন্নাথদেবের সেই স্নানযাত্রা।  জ্যৈষ্ঠের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। পুরীর মতোই হুগলির মাহেশে তিল ধারনের জায়গা নেই আজ। 

রীতি অনুসারে, এই দিনে  দেড় মণ দুধ ও আঠাশ ঘড়া গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ বলভদ্র ও সুভদ্রাকে। স্নানের পর জগন্নাথ দেবের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে বলে বিশ্বাস। তখন লেপ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকেন জগন্নাথদেব। তাঁকে সুস্থ করে তুলতে এই সময় হয় অঙ্গরাগ। ভেষজ রঙ দিয়ে জগন্নাথ দেবকে রাঙানো হয়। এ সময়টায় গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ থাকে। কবিরাজের পাঁচন খেয়ে জ্বর ছাড়লে হয় নবযৌবন উৎসব, ঠিক রথযাত্রার আগে। পরদিন রথে চেপে মাসির বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন জগন্নাথ , বলরাম , সুভদ্রা।  

৬২৯ বছরে পা দিল হুগলির মাহেশে জগন্নাথের স্নানযাত্রা। পুরীতে যেমন ১২ বছর অন্তর নব কলেবর হয়, মাহেশে বিগ্রহের কোনও পরিবর্তন করা হয় না। এতবছর ধরে একই বিগ্রহকে পুজো করা হচ্ছে। স্নানযাত্রার সকালে গর্ভগৃহ থেকে বের করে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে মন্দিরের বারান্দায় রাখা হয়। এইদিন বিগ্রহকে স্পর্শ করা যায়। 

পুরীতেও স্নান যাত্রার পুণ্য লগ্নে ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করানো হয় বিগ্রহ ত্রয়কে। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে মণ্ডপ থেকে নামিয়ে নিয়ে আসা হয় স্নানমঞ্চে। সেখানে হয় স্নানপর্ব ও বিশেষ পুজো। এরপর  জগন্নাথ দেব , বলভদ্র ও বোন সুভদ্রার ১৫ দিনের বিশ্রাম পর্ব। এরপর ফের রথযাত্রার দিন দর্শন করা যায় জগন্নাথদেবের।  

স্নানযাত্রার পর জগন্নাথ দেবের ভক্তদের অপেক্ষা থাকে রথযাত্রার । চলুন দেখে নেওয়া যাক এবার রথযাত্রা উৎসব কবে পড়ছে। এবার রথযাত্রা ২৭ জুন । উল্টোরথ ৫  জুলাই। ভক্তদের বিশ্বাস, এই সময় ভগবান জগন্নাথের দর্শন করলে জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যায় এবং মৃত্যুর পর মোক্ষ লাভ হয়।  জগন্নাথ ভক্তদের বিশ্বাস,  আষাঢ় মাসে ভগবান জগন্নাথের বোন সুভদ্রা একবার ভ্রমণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বোনের ইচ্ছে রাখতেই  ভগবান জগন্নাথ তিনটি রথ তৈরি নির্দেশ দেন। এরপর তিন ভাইবোন সেই রথে বসে শহর পরিভ্রমণ করতে বের হন এবং তাঁদের মাসির বাড়িতে ৭ দিন থাকেন। এই মন্দিরকেই বলা হয় গুন্ডিচা মন্দির।