সোমনাথ মিত্র, হুগলি: জমি আন্দোলনের ইতিবৃত্ত ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দিয়েছে আগেই। এক বার ফের ইতিহাসে নাম লেখানোর পথে হুগলির (Hooghly News) সিঙ্গুর (Singur News)। নেপথ্যে মিলন মাঝি নামের সিঙ্গুর নিবাসী এক যুবক। প্রথম চেষ্টাতেয় পায়ে হেঁটে লাদাখ পৌঁছে গিয়েছেন তিনি।  ৮৩ দিনে এই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছেন তিনি। তাতেই সিঙ্গুরের নাম একবার ফের মুখে মুখে ফিরছে সকলের (Walk to Ladakh)। 


প্রথম চেষ্টাতেই সফল


সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া গ্ৰামের বাসিন্দা মিলন। হাওড়া ব্রিজ থেকে পায়ে হেঁটে লাদাখের পথে রওনা দেন তিনি। প্রায় ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে লাদাখের খারদুংলা পাস পৌঁছেছেনতিনি। সময় নিয়েছেন ৮৩ দিন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ হাজার ৩৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই খারদুংলা পাসটি পৃথিবীর উচ্চতম মোটরগাড়ি চলাচল যোগ্য পাস বলে পরিচিত। তাই মিলনের অসামান‍্য কীর্তি নজির গড়েছে। কারণ এ রাজ্য থেকে পায়ে হেঁটে লাদাখ পৌঁছনোর এমন নজির তেমন নেই।


ফোনে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিলন জানান, প্রকৃতি তাঁর কাছে খুব প্রিয়। ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা ছিল প্রবল। কলকাতায় অনেক প্রকৃতিপ্রেমী আছেন, যাঁরা সাইকেলে, মোটর সাইকেলে চেপে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান।তাঁদের দেখেই উৎসাহিত হন তিনি। মনের সুপ্ত বাসনা ছুঁয়ে দেখার সাধ জাগে। 




মিলনের ইচ্ছেশক্তির জয়। 


কিন্তু মোটর সাইকেল কেনার মতো সামর্থ্য নেই মিলনের পরিবারের। তাই আবদার করলেও, তাঁর চা বিক্রেতা বাবা তা মেটাতে পারেননি। অতঃপর চাকরি করতে যাচ্ছেন বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন মিলন।  সিঙ্গুর থেকে সোজা হাওড়া। তার পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি হাওড়া ব্রিজের সামনে থেকে লাদাখের উদ্দেশে হাঁটা শুরু। তার একদিন পর ফেসবুকে পোষ্টে পেয়ে হেঁটে লাদাখ যাওয়ার কথা সকলকে জানান মিলন।


আরও পড়ুন: Pallavi Dey Death : খুন-প্রতারণার অভিযোগ ! পল্লবীর লিভ-ইন পার্টনার সাগ্নিককে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের


বাকিটা ইতিহাস। দুর্গম রাস্তা পেরিয়ে, ৮৩দিনের মাথায়, ১৫ মে লাদাখের খারদুংলা পাস যখন পৌঁছন, ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে দুপুর ২টো বেজে ৫ মিনিট। লক্ষ‍্যে পৌঁছে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিলন। বিজয় ধ্বজা হিসেবে পাহাড়ে উঠে জাতীয় পতাকা পুঁতে দেন। 


 মিলনের বাবা অনিল মাঝি কামারকুণ্ডুতে হুগলি গ্ৰামীন পুলিশ দফতরের সামনে চায়ের দোকান চালান। দোকানে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘‘মিলন মেকানিক‍্যাল ইঞ্জিনিয়ারের ডিপ্লোমা করেছিল। তার পর রানিগজ্ঞে কাজ করত। লকডাউনে কাজ চলে যায়। তার পর চাকরি করতে যাচ্ছেন বলে বেরিয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। পরে সোশ‍্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পারি লাদাখ যাচ্ছে। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। তারপর প্রচুর লোক যখন ওকে শুভেচ্ছা জানায়, কিছুটা ভরসা পাই।’’ 


ছেলের ঘরের ফেরার অপেক্ষা


মিলনের মা চণ্ডী মাঝি বলেন, ‘‘কাজে যাচ্ছে বলে ৬ হাজার টাকা চেয়েছিল। কিন্তু সামর্থ‍্য ছিল না আমাদের। মাত্র ১ হাজার টাকা ওকে দিয়েছিলাম এবং সঙ্গে কিছু খাবার দিয়েছিলাম। আর কিছু ওর জন‍্য করতে পারিনি। লাদাখ যাওয়ার খবরটা শোনার পর মিলনের বাবা দু’দিন খেতে পারেনি। পরে নিজের কষ্ট চেপে রেখে মিলনের বাবাকে সামলাই। এখন ও যে স্বপ্ন পূরণ করেছে, তাতে আমি গর্বিত।’’ ছেলে ঘরে ফিরলে আরও আনন্দিত হবেন বলে জানিয়েছেন মিলনের মা।