সোমনাথ মিত্র, হুগলি : হুগলির (Hooghly) সিঙ্গুরের (Singur) ছিনামোড় সমবায় সমিতি থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে গেছে গ্রাহকদের মধ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, ইতিমধ্যেই কয়েকশো গ্রাহক তুলে নিয়েছেন প্রায় আড়াই কোটি টাকা। তৃণমূলের (TMC) দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিরোধীরা। শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা। গ্রাহকদেরও বক্তব্য, যারা লুটপাট করে সমবায়ের শীর্ষে থাকতে চাইছে তাদের উপর ভরসা নেই। আতঙ্কের কারণ নেই, আশ্বাস ম্যানেজারের (Manager)।
সমবায় সমিতির ভোট ঘিরে ধুন্ধুমার !
বহিরাগতদের এনে ভোট লুঠের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের (TMC) বিরুদ্ধে। দফায় দফায় বিক্ষোভ (Agitation) দেখায়। পথ অবরোধ করে বামেরা। পুলিশের (Police) গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা (Villegers)। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, ছিনামোড় সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচন ঘিরে এবাবেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হুগলির সিঙ্গুর। প্রায় ২০ বছর পর বামেদের হাত থেকে সমবায় ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ৫৭টি আসনের মধ্যে ৫৩টিতে জয়ী হন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। বাম সমর্থিত প্রার্থীরা ৪টিতে জয়ী হন। ১৪টি আসনে প্রার্থী দিলেও, একটি আসনের জিততে পারেনি বিজেপি (BJP)।
টাকা তোলার হিড়িক
এই প্রেক্ষিতেই শুরু হয়েছে টাকা তোলার হিড়িক। সমবায় সূত্রে খবর, এখানকার গ্রাহক সংখ্যা ৬ হাজার। ফল ঘোষণার পর অন্তত ৫০০ জন গ্রাহক তুলে নিয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। গ্রাহকদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা জমা টাকা নিয়ে আতঙ্কিত। এক গ্রাহক বলেছেন, 'আমার ১১ লক্ষ টাকা ছিল সমবায়ে, আমি সব টাকা তুলে নিয়েছি। আমার স্বামী নেই। এই টাকা চলে গেলে আমার সব টাকা চলে যাবে। এই সমবায়ের উপর আর ভরসা নেই। কারণ তৃণমূল সব লুঠেপুটে নিয়ে নিচ্ছে। আমার ৩৯ বছর বয়সে আমি এরকম ভোট জীবনে দেখিনি তাই আমরা রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছি।'
অন্য এক গ্রাহকের কথায়, 'যখন সমস্ত জায়গা বন্ধ থাকে তখন এই সমবায়টা রবিবার খোলা থাকে এবং বাড়ির একদম কাছাকাছি। তাই সেভিং এ প্রায় ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ছিল। ভোটের পর থেকে এখন অবধি ৩ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছি। কারণ, যারা লুঠপাট করে সমবায়ের শীর্ষে থাকতে চাইছে তাদের উপর ভরসা নেই। কারণ তারা লুঠপাট করে সমবায়টাকেই তুলে দেবে। আমি ছাড়াও এখানে অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছে এই কারণে।'
আশ্বাস ম্যানেজারের
যদি সমবায়ের ম্যানেজারের দাবি, আতঙ্কে নয়, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে টাকা তুলছেন গ্রাহকরা। সিঙ্গুরের ছিনামোড় সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার সন্দীপকুমার কোলে বলেছেন, '২১ তারিখ থেকে বেশ কিছু গ্ৰাহক আবেদন দিয়ে তাদের টাকা তুলে নিচ্ছে। তারা সবাই ব্যক্তিগত কারন দেখিয়েই টাকা তুলে নিচ্ছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।'
কিন্তু একই সময়ে এত সংখ্যক গ্রাহক ব্যক্তগত কারণ দেখিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছেন কেন? বিরোধীদের দাবি, যেভাবে বোর্ড দখল করা হয়েছে, তাতে গ্রাহকরা আতঙ্কিত, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর আস্থা হারিয়েছেন। বিরোধীদের উদ্দেশে পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। গ্রাহকদের অযথা আতঙ্কিত হওযার কারণ নেই। সবার আমানতই সুরক্ষিত রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন সমবায়ের ম্যানেজার। কিন্তু আমানত নিয়ে আতঙ্ক কাটছে না গ্রাহকদের।
আরও পড়ুন- টাকার পাহাড়ে শহর ! ফের বান্ডিল বান্ডিল নোট উদ্ধার, কোটি কোটি টাকার খোঁজ