সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি :  করোনা আবহে গত দুবছর ঘোষাল বাড়ির পুজোয় ছিল না জাঁকজমক। কিন্তু এই বছর সেই বাঁধা কাটিয়ে নতুন উদ্দমে সাজছে ঘোষাল বাড়ির পুজোর স্বমহিমা। এই পুজো উত্তরপাড়ার প্রাক্তন তৃনমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের বাড়ির পুজো বলেই পরিচিত।


পুজোর দিনগুলিতে ঘোষাল বাড়ি গমগম করে।  বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবার । তাঁরই মহড়া চলছে ঘোষাল বাড়ির ঠাকুর দালানে। একদিকে চলছে মূর্তি তৈরির কাজ, অপরদিকে চলছে মহিষাসুরমর্দিনীর মহড়া।


৫৬৭ তম বর্ষে পদার্পণ
বাড়ির প্রতিমাকে সুন্দর রূপ দিতে মৃৎশিল্পীর সঙ্গে প্রতিমা তৈরি তে হাত লাগিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল।
ঘোষাল বাড়ির পুজো এইবছর ৫৬৭ তম বর্ষে পদার্পণ করছে। পুজোয় সেই জমিদারি চালচলন না থাকলেও হারিয়ে যায়নি কোন্নগর ঘোষাল বাড়ির ঐতিহ্য। পুজোর সেই জৌলুসকে ধরে রেখেছে ঘোষাল বাড়ির নতুন প্রজন্ম।

কোন্নগরে পুজো শুরু কবে 
সম্রাট আকবরের শাসনকালে কোন্নগরের ঘোষালরা জমিদাররূপে  স্বীকৃতি পায় বলে জানা যায়। তারপর ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজো প্রচলন । কথিত আছে এককালো এঁদের জমিদারভুক্ত হওয়ার পর হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন জমিদারি এলাকা থেকে প্রজারা দলে দলে উৎসবের দিনগুলিতে যোগ দিতে আসত। পুজোর চার দিন এই ঘোষাল বাড়িতে  পাত পড়ত। প্রজাদের সঙ্গে নিয়ে আসা কাঁচা আনাজ, মাছ ও নারকেল দিয়ে পুজোর কাজে ব্যাবহৃত হতো।


৭৫০ টাকা রোজ খরচ !
ব্রিটিশ শাসন কালে রোজ ৭৫০ টাকা মঞ্জুর করা হতো পুজোর খরচ হিসাবে। এই ঘোষাল বাড়ির পুজোতে বাইরের কোনো কেনা মিষ্টি দিয়ে ভোগ হয়না। প্রতিপদের দিন অর্থাৎ পঞ্চমীর দিন বাড়িতে তৈরি হয় নারকেল নাড়ু। যা দিয়ে পুজোর কটা দিন ও দশমীর দিন মিষ্টি মুখ করানো হয় অতিথিদের। গঙ্গা থেকে ধরে আনা জেলেদের ইলিশ মাছ দিয়ে দশমীর দিন বাড়ির বিবাহিত মহিলারা পান্তা ভাত ও ইলিশ মাছ ভাজা খেয়ে গঙ্গায় বিসর্জন দেয় মা দুর্গাকে। এই রেওয়াজ চলে আসছে বরাবর।

ট্র্যাডিশন 
উল্টোরথের দিন কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হয় মূর্তি তৈরির কাজ। প্রতিপদ থেকে শুরু হয় চন্ডীপাঠ। বৈশিষ্ট্য, ঘোষাল বাড়ির পুজোর দিনগুলিতে ঢাকের বদলে ঢোল ও কাঁসর বাজানো হয়।  এই ঘোষাল বাড়িতে পুজোর দিনে গান গাইতে এসেছিলেন বড় গুলাম আলি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সহ অনান্য শিল্পীরা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এই ঘোষাল বাড়িতে রাতও কাটিয়ে গিয়েছিলেন। রীতি অনুযায়ী দশমীর দিন সকালে প্রথম ঘোষাল বাড়ির প্রতিমা বিসর্জনের পর এলাকায় অনান্য প্রতিমা বিসর্জন হয়।