সোমনাথ মিত্র, সিঙ্গুর : হুগলির সিঙ্গুরে সমবায় ব্য়াঙ্কের ১ কোটি টাকার হিসেবে গরমিল। ম্য়ানেজার, হিসাবরক্ষক ও এক কর্মীর বিরুদ্ধে উঠেছে টাকা তছরুপের অভিযোগ। ব্য়াঙ্কে এসেও জমানো টাকা তুলতে পারছেন না গ্রামবাসী। ম্য়ানেজার অভিযোগ অস্বীকার করে হিসাবরক্ষকের কাঁধেই দায় ঠেলেছেন। বিষয়টা নিয়ে মুখ্য়মন্ত্রীর দফতরে জানানো হয়েছে বলে ব্য়াঙ্ক সূত্রে খবর। 


প্রচণ্ড রোদের মধ্য়ে তেতে পুড়ে কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ব্য়াঙ্কে আসছেন। কিন্তু ব্য়াঙ্কে এসে, নিজের জমানো টাকা তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ ! অভিযোগ, সমবায় ব্য়াঙ্কের টাকা তছরুপ হয়েছে।


১ কোটি টাকার হিসেবে গরমিল ! অভিযোগের তির ব্য়াঙ্কের ম্য়ানেজার, হিসেবরক্ষক ও এক কর্মীর দিকে। এর ফল ভুগতে হচ্ছে, গরিব গ্রামবাসীকে। হুগলির সিঙ্গুরের খাসেরচক চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড, গ্রামের মানুষ খেটে খুটে যেটুকু টাকা জমাতে পারেন, তা রেখে যেতেন তৃণমূল পরিচালিত এই সমবায় ব্য়াঙ্কে। অভিযোগ, ব্য়াঙ্কের টাকা লুঠ করছেন ব্য়াঙ্কের একাধিক কর্মী ও আধিকারিকরা। তার ফলে, নিজেদের জমানো টাকা তুলতে এসেও দিনের পর দিন ফিরে যেতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। খাসেরচকের চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের গ্রাহক কৃষ্ণা দাস বলেন, গ্ৰামের মধ্যে সমবায় কাছে। ব্যাঙ্ক অনেক দূরে । প্রয়োজনে তাড়াতাড়ি পাব বলে এখানে লক্ষাধিক টাকা রেখেছি। কিন্তু টাকা তুলতে এসে দীর্ঘদিন ধরে ফিরে যাচ্ছি। কোনও টাকা দিচ্ছে না। বলছে টাকা নেই।

কেউ লোকের বাড়ি কাজ করেন, কেউ বা চাষের কাজ। কষ্টার্জিত টাকা রেখেছিলেন গ্রামের সমবায় ব্য়াঙ্কে। সেখানে এই আর্থিক তছরুপের অভিযোগ ওঠায়, আতঙ্কিত গ্রামবাসী। চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের গ্রাহক সীমা ভাণ্ডারি বলেন, আমাদের গোষ্ঠীর প্রায় ৮০হাজার টাকা জমা আছে। কিন্তু সেই টাকা প্রয়োজনে পাচ্ছি না। তাই গোষ্ঠী বন্ধ করে টাকা তুলে নিতে চাই। কারণ, আমাদের কষ্টের টাকা যদি প্রয়োজনে না পাই তাহলে রেখে লাভ কী?

টাকা তছরুপের কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ব্য়াঙ্কের পরিচালন সমিতির সম্পাদক। খাসেরচক - চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের পরিচালন সমিতির সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, হিসাব রক্ষক কৌশিক অধিকারী লক্ষ লক্ষ টাকা সংগ্ৰহ করে ব্যাঙ্কে জমা দেননি। আর ম্যানেজার এই বোর্ডকে না জানিয়ে ১২ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছেন। এবং কৌশিক অধিকারী ১৯লক্ষ টাকা লোন নিয়েছেন। দু'জনেই সিকিউরিটির অর্থ জমা রাখেননি। এটা জানার পরেই আমরা তাঁদের টাকা জমা দিতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা কোন টাকা জমা দেননি। এই তছরুপে আপাতত ৬৮ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। এবং এটা আরও বাড়তে পারে।

কাঠগড়ায় ম্য়ানেজার ও হিসেবরক্ষক ! খাসেরচক - চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের ম্য়ানেজার সুখেন্দু দাস বলেন, সমবায় তছরুপ হয়েছে। অনেক লোন Overdue আছে। এখানকার ক্যাশিয়ার কৌশিক অধিকারী গ্ৰাহকদের থেকে টাকা নিয়ে গ্ৰাহকের খাতায় তুলেছেন, কিন্তু সেটা ক্যাশ কাউন্টারে জমা পড়েনি। এখন পর্যন্ত হিসাবে আনুমানিক ১কোটি টাকার গরমিল ধরা পড়েছে।


কৌশিক অধিকারী বলেন, 'এই নিয়ে আমি কিছু বলব না। ওঁরা বলছেন আমি করেছি। এটা তদন্ত সাপেক্ষ। আমি ক্য়াশিয়ার। টাকা নেওয়া আমার দায়িত্ব। বাকি টাকা কোথায় গেল তার জন্য় অ্য়াকাউন্ট্য়ান্ট রয়েছে। লোন নিয়েছি বলতে পারি। কিন্তু কাগজপত্র জমা দিইনি এটা ঠিক নয়।' তাঁকে জানতে চাওয়া হয়, তছরুপ হয়েছে এটা কি সত্য়ি ? উত্তরে কৌশিক অধিকারী বলেন, 'আমি বলব না। বোর্ড বলবে। প্রমাণ সাপেক্ষ।'


ব্য়াঙ্কের ম্য়ানেজারের দাবি, এবিষয়ে মুখ্য়মন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানানো হয়েছে।