সিঙ্গুর: সিঙ্গুরে (Singur) বিজেপির (BJP) ধর্না (Sit-in) কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ বিতর্ক। জেলা স্তর, রাজ্য স্তর অথবা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে কেউ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি, দাবি বিজেপি নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের (Rabindranath Bhattacharya)। যে এলাকায় বিজেপির ধর্না কর্মসূচি সেই গোপালনগরের পঞ্চায়েতের সদস্য বিজেপি নেতা দীপঙ্কর বেরাকে আমন্ত্রণ না করার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। 


উল্লেখ্য, এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে  সিঙ্গুর আসনের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলেন সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক।


১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় পুরভোট। তার আগে কলকাতা ছেড়ে সিঙ্গুরে আন্দোলনে বিজেপি। একসময় হুগলির এই জনপদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি আন্দোলনের জেরে টাটারা সিঙ্গুর ছাড়া হয়েছিল, এবার সেই সিঙ্গুর থেকে তৃণমূলকে হটানোর ডাক দিল বিজেপি। কৃষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়াকে সামনে রেখে তিনদিন ব্যাপী ধরনায় বসছে তারা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই ধরনা চলবে। কিন্তু এই কর্মসূচীতে দেখা যায়নি সিঙ্গুরের 'মাস্টারমশাই'কে।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকরণে পৌঁছনোর পিছনে সিঙ্গুরের যে কৃষি আন্দোলনকে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে দেখা হয়, মঙ্গলবার থেকে সেখানেই কৃষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে ধর্না-বিক্ষোভ শুরু করেছে বিজেপির কৃষক সংগঠন ভারতীয় জনতা কিষাণ মোর্চা। সেখানে রাজ্য বিজেপির তাবড় নেতারা উপস্থিত থাকলেও, সিঙ্গুরের বিজেপি নেতাদেরই ব্রাত্য করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।


মঙ্গলবার সিঙ্গুরের গোপালনগরে যেখানে ধর্নাকর্মসূচি হল, সেখান থেকে ৫০০ মিটার দূরে স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যের বাড়ি। রাজ্য বিজেপি নেতারা যখন একে এক আক্রমণ শানাচ্ছেন, তখন দেখা গেল নিজের ঘরে ধানের বস্তা গুছিয়ে রাখছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা।


গোপালনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য দীপঙ্কর বেরা বলেছেন, আমি আমন্ত্রণ পাইনি, তাই যাইনি। হয়তো আমাদের মতো লোকেদের প্রয়োজন নই। এভাবে কোনও দল চলে না।


সভাস্থল থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে সিঙ্গুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যের বাড়ি। দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলার সময়, তাঁকেও পাওয়া গেল বাড়িতে!


সিঙ্গুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য  ও মণ্ডল সভাপতি গৌতম মোদক বলেছেন, আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটাই রাজ্য বিজেপির অহঙ্কার। এরা প্রয়োজন বোধ করে না কর্মীরা বসে আছে জেনেও সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে প্রোগ্রাম করার। বিজেপি তো ফেসবুকে চলে। ফেসবুক থেকে জেনেছি। কেউ জানায়নি। আন্দোলনে যোগদান করব না। সিঙ্গুর ব্লকে প্রায় ২৮ জন বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য আছেন। আমার মতো অনেককেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।।


তৃণমূল কংগ্রেসের গোপালনগর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি অমিয় ধারা বলেছেন, এটা কৃষক বিরোধী আন্দোলন। তাই হয়তো অনেকেই নেই। তাছাড়াও ওদের দলের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলে পা বাড়িয়ে রয়েছেন।


বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি মধুসূদন দাস বলেছেন, বিষয়টা সেরকম নয়। গতকাল পুলিশের তরফে ইঙ্গিত পেয়েছিলাম সভার বিষয়ে। সমস্ত স্তরের কর্মীদের কাছে বার্তা যায়নি। অনেকেই অবহিত ছিলেন না সভা হবে কি হবে না। প্রোগ্রামটা কিষাণ মোর্চার ব্যানারে হচ্ছে। কাকে কাদের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তা নিয়ে অবগত নই।


সব মিলিয়ে সিঙ্গুরে বিজেপির ধরণা ঘিরে তরজা তুঙ্গে।