সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরপাড়া: পুলিশ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে বছরখানেক পর বাড়ি ফিরলেন হুগলির পাণ্ডুয়ার এক বৃদ্ধা। তিনি যেমন এতদিন পরে বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি, তেমনই উদ্বেগ দূর হয়ে স্বস্তি পরিবারে। মাকে ফিরে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এই বৃদ্ধার ছেলে।


পুলিশ সূত্রে খবর, বছরখানেক ধরে এই বৃদ্ধার ঠিকানা ছিল উত্তরপাড়ার সি এ মাঠ শক্তি সংঘ এলাকার পথঘাট,  দোকান, কারও বাড়ির সামনের ফুটপাথ। কনকনে ঠান্ডায় রাস্তার ধারে বসে কাঁপতে দেখে তাঁর গায়ে কম্বল দেন স্থানীয়রা। তাঁরা এই বৃদ্ধাকে খেতেও দেন। এমনকী, কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তিও করেন।


উত্তরপাড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রেরণা’-র সদস্যরা উত্তরপাড়া থানায় এই বৃদ্ধার কথা জানান। এরপরেই পুলিশ তৎপর হয়। অসহায় প্রবীণ নাগরিকদের সাহায্য করার জন্য চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের একটি বিশেষ বিভাগ আছে, যার নাম ‘স্পর্শ’। উত্তরপাড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় ‘স্পর্শ’-র একজন সদস্য। তিনি উত্তরপাড়া থানার আই সি পার্থ সিকদারকে এই অসহায় বৃদ্ধার কথা জানাতেই আই সি তাঁকে বৃদ্ধার কোনও পরিবার আছে কিনা বা থাকলে কোথায় তা খোঁজ করতে বলেন।


ইতিমধ্যেই ‘প্রেরণা’-র পক্ষ থেকে শ্রীরামপুরের মহকুমা শাসককেও এই বৃদ্ধার বিষয়টি জানানো হয়। মহকুমা শাসক সম্রাট চক্রবর্তী উত্তরপাড়া থানাকে পুলিকে বিষয়টি দেখতে বলেন। পুলিশ বিভিন্ন থানায় খোঁজ করে জানতে পারে, হুগলির পান্ডুয়ায় বৃদ্ধার বাড়ি। পান্ডুয়া থানায় বছরখানেক আগে নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছিল তাঁর নামে। জানা যায় তাঁর নাম বিলা বিবি,  বয়স ৬৫। বাড়ি পান্ডুয়ার সোমড়াগড়ি মসজিদতলায়। স্বামীর নাম শেখ মেহের আলি, ছেলের নাম শেখ ইয়ামিন আলি।


‘স্পর্শ’-র পক্ষ থেকে বিলা বিবির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর আজ একটি গাড়ি ভাড়া করে ‘প্রেরণা’-র এক সদস্যকে নিয়ে বৃদ্ধাকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘরে নিয়ে যান ছেলে। অনেক দিন পর বাড়ি ফিরে, নিজের ছেলেকে দেখতে পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা।


উত্তরপাড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘চন্দননগর পুলিশের স্পর্শ এমন মানুষদের সাহায্য করে। বিলা বিবির চিকিৎসার প্রয়োজন। তা ওঁর পরিবারকে জানিয়েছি।’


মাকে ফিরে পেয়ে খুশি শেখ ইয়ামিন আলি। তিনি জানিয়েছেন, ‘হঠাৎই একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল মা। তারপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কোথাও মাকে না পেয়ে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ মাকে বাড়ি ফিরিয়ে দিল।’