সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডানকুনি : ব্যাটারির কারখানায় কাজ করতেন বাবা। বছরখানেক আগে হঠাৎই সেখানে আগুন লাগায় রাতারাতি বদলে গিয়েছিল দৈন্দদিনের যাপন। কাজ হারিয়েছিলেন বাবা অজিত ঘোষ। অভাবের কষ্টের সংসারে দিনযাপনের মধ্যে যেন একফালি স্বপ্নের আলো এনে দিয়েছে মেয়ে। শ্রীরামপুর হোলিহোম স্কুলের ছাত্রী মেহেলি ঘোষ। ISC টুয়েলভে ৯৯.২৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে দেশের মধ্যে তৃতীয় হয়েছে ডানকুনির ভাদুয়ার মেয়ে মেহেলি।


ভবিষ্যতে চিকিৎসকর হওয়ার স্বপ্ন দেখে অজিত ও দীপা ঘোষের একমাত্র পেয়ে মেহেলি। মেডিক্যাল পরীক্ষায় পাশ করে কলকাতার কোনও সরকারি কলেজ থেকে এমএমবিএস পড়াই তাঁর লক্ষ্য বলে জানিয়েছে মেহেলি। পড়ার চাপ কমাতে আঁকা তাঁর পছন্দের সময়যাপন। চিকিৎসক হয়ে অভিভাবকদের দুঃখ মেটানোরই প্রত্যাশা তাঁর। বায়োলজিতে একশোয় একশো, ইংরেজি, অঙ্ক, ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রি চার বিভাগে ৯৯ করে ও বাংলায় ৯৬ নম্বর পেয়েছে মেহেলি।


ব্যাটারির কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেভাবে নিশ্চিত কোনও অর্থ সংস্থানের পথ নেই অজিত বাবুর। নিজেদের অল্প কিছু চাষের জমি দেখা ও বিভিন্ন গোডাউনের কাছে মজদুরি করে পাওয়া অর্থ দিয়ে সংসার চালান। তাঁর স্ত্রী দীপাদেবী গৃহবধূ। অভাবের সংসার হলেও মেয়ের পড়াশোনায় যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য চেষ্টার কসুর করেননি বাবা-মা। পাশাপাশি মেহেলি মাসি ও দাদু প্রয়োজনে আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশের মধ্যে তৃতীয় হওয়ার পর ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে দুঃখের দিনলিপি মেয়ের হাত ধরেই বদলাবে বলে প্রত্যাশা রাখেন ঘোষ দম্পতি।


প্রসঙ্গত, সর্বভারতীয় মেধা তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা ১৮ জনের মধ্যে রয়েছেন এ রাজ্যের ৬ জন পড়ুয়া। সবাই পেয়েছেন ৯৯.৭৫% নম্বর। যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ১৯ জন পড়ুয়া, তাঁরা পেয়েছেন ৯৯.৫% নম্বর। এবং যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ১৬ জন, তাঁরা পেয়েছেন ৯৯.২৫% নম্বর। CISCE সূত্রে খবর, এ রাজ্যে মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৯৯.৪১ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ছাত্রীদের তুলনায় কিছুটা কম, ৯৮.৯৩ শতাংশ।


আরও পড়ুন- গৃহশিক্ষক ছাড়াই সিবিএসই দ্বাদশে ৯৯.২ %, 'খুশির' হাওয়া বাড়িতে