সোমনাথ মিত্র, হুগলি: 'সিঙ্গুর (Singur) থেকে টাটাদের (TATA) সিপিএম তাড়িয়েছে', মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) এই মন্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত হলেন না। সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা মাস্টার মশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (Rabaindranath Bhattacharjee)। আজ তিনি বলেন, একমাত্র সিপিএম জন্যেই টাটা চলে গেছে তাতে আমি সহমত পোষণ করিনা। সিঙ্গুর আন্দোলনকারী রূপে আমরা যারা নেতৃত্বে ছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও  অন্যান্য দলসহ সবাই মিলে যে ধর্না মঞ্চ করে যে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মূলত সেই সব কারনেই টাটা চলে গিয়েছে।


'ধর্নামঞ্চ ও আন্দোলনের কারণেই টাটা-রা সিঙ্গুর ছেড়েছিল।  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের সঙ্গে সহমত নন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সিপিএমের জন্যই টাটা-রা চলে গেছে, তাতে আমি সহমত নই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য দল-সহ সবাই মিলে ধর্নামঞ্চ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল, মূলত সেই কারণেই টাটা-রা চলে গেছে', বলে জানিয়েছেন সিঙ্গুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক। নিরাপত্তার কারণেই টাটা গোষ্ঠী রাজ্য ছেড়েছিল বলে দাবি রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য-র। 


তিনি আরও বলেন, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সামনে যে চুক্তি হয়েছিল কিংবা, সেই চুক্তিতে বাতিল করে পরবর্তীকালে পলিটব্যুরো যে শর্ত দিয়েছিল  কথা বলেছিলেন সেই সম্পর্কিত কথাবার্তাটা তাদের কাছে পৌঁছায়নি। রতন টাটা চলে গেছে মূলত ধর্না মঞ্চের আন্দোলন তখন  প্রবল রূপ নিয়েছিল তখন।  ঘোষনা করেছিল তারা সিঙ্গুরে আর কারখানা করব না। গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সামনে হওয়া চুক্তিটিকে পলিটব্যুরো বাতিল করেছিলেন বলেই, সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সিপিএম  ন্যানো কারখানা হতে দেয়নি। তাই আমি মুখ্যমন্ত্রীর কথার সাথে সহমত হচ্ছি না। কারন চুক্তির  প্রস্তাব টাটার কাছে যায়নি। রতন টাটার কাছে বিচার্য্য ছিল কারখানাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি। আর সেই ঘটনাগুলো থেকেই নিরাপত্তার কারণে সম্ভবত তিনি এখান থেকে টাটা কারখানা প্রত্যাখান করেছিলেন।


প্রসঙ্গত, সামনের বছরের গোড়ার দিকেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন  হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। তার আগে বঙ্গ রাজনীতিতে ফিরে এল সিঙ্গুর পর্ব (Singur Movement)। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল (TMC) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ সেই প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। তাঁর দাবি, টাটাকে তিনি তাড়াননি, তাড়িয়েছিল সিপিএম-ই (CPM)। তাঁর এই মন্তব্য সামনে আসার পরই জোর তরজা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।বুধবার দুপুর থেকে নিজেদের মতো করে রতন টাটার সেই উক্তি তুলে ধরেছেন তৃণমূল বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। কিন্তু কী বলেছিলেন রতন টাটা ? ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর সংবাদমাধ্যমের সামনেই সিঙ্গুর থেকে টাটার উৎখাত হওয়া নিয়ে মুখ খুলেছিলেন রতন টাটা। 


আরও পড়ুন, 'জেলেই থাকতে হবে', সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা মানিক ভট্টাচার্য-র


উপলক্ষ ছিল বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান। বুধবার শিলিগুড়িতে দলের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন মমতা। সেখানে আচমকাই সিঙ্গুর পর্ব উঠে আসে তাঁর মুখে। তাতেই কার্যত বিস্ফোরণ ঘটেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মমতার এই দাবি রাজ্য রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলেও অত্যূক্তি হয় না। কারণ যে সিঙ্গুর একসময় বাংলার শিল্প-সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠতে উঠতেও শেষ অবধি সেই সম্ভাবনার সমাধি ঘটেছে। তার পর থেকে রাজ্যে শিল্প না আসার জন্য বার বার প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে মমতাকে।