মোহন দাস, হুগলি: রুপনারায়নের জল ঢুকে ফের প্লাবিত হুগলির খানাকুলের তিন-চারটি গ্রাম। জল ঢুকেছে বেশ কিছু বাড়ির ভেতরেও। ইতিমধ্যেই অনেকে বাড়ি ছেড়ে স্কুল ও উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। 


তবে প্রায় দেড় মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় বার এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ব্যপক সমস্যায় খানাকুলের ধান্যঘড়ি, ঘোড়াদহ,কাকনান ,বন্দর গ্রামের মানুষ। খানাকুলের ধান্যঘড়ির এই এলাকাতেই প্রায় দেড় মাস আগে ভেঙে গিয়েছিল রুপনারায়নের বাঁধ।  সেই বাঁধ ভেঙে জলের তলায় চলে গিয়েছিল বহু বাড়িঘর।  তছনছ হয়ে যায় এই গ্রামগুলির রাস্তা ঘাট।  সেই সব ক্ষত কাটিয়ে ধিরে ধিরে ছন্দে ফিরছিল খানাকুল।  ভাঙা বাঁধের অংশেও বস্তা দিয়ে মেরামতির কাজও চলছিল। 


কিন্তু এই কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টির জলের পাশাপাশি দ্বারকেশ্বর ও শিলাবতি নদীর জলের চাপে  সারিয়ে তোলা ভাঙা বাঁধ ভেঙে ফের জল ঢুকছে হুহু করে। তার ফলেই জলমগ্ন হয়ে পরেছে তিন চারটি গ্রামের বহু বাড়ি। জলের তলায় চলে গিয়েছে চাষের জমিও। ফলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন কৃষকরা। ফলে নতুন করে আতঙ্কিত খানাকুলের এই সমস্ত গ্রামের মানুষ।


 উল্লেখ্য,  ঘূর্ণাবর্তের জেরে বৃষ্টি।  আর তার ফলে ফের দুই মেদিনীপুরেও জল-দুর্ভোগ দেখা  দিয়েছে।  কিছুদিন আগের বিপত্তি কাটতে না কাটতেই ফের বিপত্তি বেঁধেছে। কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙে বিপর্যস্ত পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লক।পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে বৃষ্টির জমা জল তো রয়েইছে, তার ওপর ঢুকতে শুরু করে শিলাবতী নদীর জল ঢুকেছে।ফলে জলমগ্ন বহু এলাকা।  এদিকে গতকাল নিখোঁজ এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয় নারায়ণগড়ে।  


পটাশপুর ১ নম্বর ব্লকের কাছে বৃহস্পতিবার রাতে কেলেঘাই নদীর বাধ ভাঙে। যার জেরে ১ নম্বর ব্লক, পটাশপুর ২ নম্বর ব্লকের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত, এগরা ১ নম্বর ব্লকের ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত জলমগ্ন হয়ে পড়ে।  বাড়িঘর, বাজারহাট জলের তলায় চলে যায়।  কোথাও কোমর, তো, কোথাও গলা জল। পটাশপুর থেকে নৈপুর হয়ে সবং যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ জলের তলায় চলে যায়। 


গতকাল জেলাশাসক জানিয়েছিলেন, প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে।  খোলা হয়েছে ২০০-র বেশি ত্রাণশিবির। যদিও দুর্গতদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ত্রাণ মিলছে না।  


জল-দুর্ভোগ ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী গতকাল অভিযোগ করেন, এই সরকার তিনদিন ধরে কিছুই করেনি। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এই দুর্ভোগের মধ্যে সাধারণ মানুষকে পড়তে হত না। আমি গতকাল রাতে জেলাশাসককে ফোন করেছিলাম। প্রয়োজনে আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব।   পাল্টা তৃণমূল নেতা ও সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, কেলেঘাইয়ের বাঁধ ভাঙার কথা এখন বলছেন শুভেন্দুবাবু। কিন্তু উনি ১০ বছর মন্ত্রী ছিলেন। তখন কী করেছেন? .....এখন বড় বড় কথা বলছেন। 


ঘাটালের ১৩টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টির জমা জলে একেই অবস্থা সঙ্গীন ছিল, তার ওপর বাঁধ মেরামতি শেষ না হওয়ায় শিলাবতীর জলও ঢুকতে শুরু করে। ফের নৌকায় শুরু হয় যাতায়াত।