সোমনাথ মিত্র, সিঙ্গুর (হুগলি) : প্রতিশ্রুতি দিয়েও নিয়োগ করা হয়নি। তাই নিয়োগের দাবিতে ২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট পাশ ট্রেন্ড নট-ইনক্লুডেড একতা মঞ্চের শতাধিক সদস‍্য মিছিলে শামিল। "খেলা হবে, নিয়োগের খেলা হবে", এই স্লোগান তুলে সংগঠনের সদস‍্যরা সিঙ্গুরের মল্লিকপুর থেকে শুরু করেন মিছিল। আর, সিঙ্গুরে চাকরি প্রার্থীদের এই মিছিল নিয়ে সবুজ-গেরুয়া শিবিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।


সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২০১৬ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর অনিচ্ছুক কৃষকদের হাতে জমির পরচা ও ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দিয়ে সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। তাই ঘোষণা করা হয় , ১৪ সেপ্টেম্বর দিনটি সিঙ্গুর দিবস হিসাবে পালন করা হবে। সেই সিঙ্গুর দিবসের দিনেই সিঙ্গুর থেকে প্রাথমিকে নিয়োগের দাবিতে মিছিল করলেন ট্রেন্ড নট্-ইনক্লুডেড একতা মঞ্চের শতাধিক সদস‍্য। হুগলি ও আশপাশের সমস্ত জেলা থেকে শতাধিক সদস‍্য বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সিঙ্গুরের মল্লিকপুর মোড় থেকে মিছিল শুরু করেন। সিঙ্গুর থানার সামনে বসে পড়ে কিছুক্ষণ বিক্ষোভও দেখান। মিছিলটি শেষ হয় সিঙ্গুর স্টেশনে গিয়ে। "খেলা হবে খেলা হবে, নিয়োগের খেলা হবে", "নিয়োগ চাই নিয়োগ চাই, পুজোর আগে নিয়োগ চাই"- এসব স্লোগান দিতে থাকেন সংগঠনের সদস‍্যরা।


সংগঠনের সদস‍্য মল্লিকা কোলে বলেন, আমরা ২০১৪ টেট পাশ প্রশিক্ষিত প্রার্থী। প্রাথমিকে চাকরির জন‍্য যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই আমরা অর্জন করেছি। টেট ফেল করারা চাকরি পাচ্ছে। আমরা পাশ করেছি। তা সত্ত্বেও পর্ষদের কোনও এক অশুভ শক্তির কারণে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই সিঙ্গুরের মাটি থেকে দিচ্ছি ডাক, নিয়োগ চাই নিয়োগ চাই।


সংগঠনের আরেক সদস‍্য অর্ণব ঘোষ বলেন, মাননীয়া কথা দিয়ে কথা রাখেন, ১৪ সেপ্টেম্বর যেমন সিঙ্গুরে জমি ফিরিয়ে দিয়ে কথা রেখেছিলেন। তিনি নবান্নে ২০০০০ হাজার নিয়োগ ধাপে ধাপে দেবেন বলেছিলেন। প্রথমে ১৬৫০০  , তারপর ধাপে ধাপে । কিন্তু পর্ষদের লিস্টে ১২৬০০ জনের নাম বের হয়। সেখানে প্রায় ১৫০০ জনের মতো নন জয়েনিং সিট রয়েছে। তাহলে আমরা যেখানে নন ইনক্লুডেড হয়ে রয়ে আছি, আমাদের সেখানে নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে এক বছর হয়ে গেলেও আমাদের নিয়োগ হচ্ছে না। এর বার বার দাবি করেও আমরা পাচ্ছি না। দিদি আমাদের রক্ষা করুন। আপনি হস্তক্ষেপ করে সকলের নিয়োগ করুন।


অন‍্যদিকে সিঙ্গুরে এই মিছিল নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি জড়িয়েছে রাজনৈতিক তরজায়। বিজেপি-র হুগলি সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, চাকরি দেবেন কোথা থেকে ? চাকরি যাতে দিতে না হয়, তারজন‍্য দুয়ারে সরকারের মাধ‍্যমে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করেছেন। ৫০০-১০০০ হাজার টাকা করে দিলে কোথা থেকে চাকরি দেবেন। চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন যথাযথ । যাঁরা চাকরি পাচ্ছেন, তাঁরা তৃণমূলের নিকট আত্মীয়।


যদিও বিজেপির দাবি উড়িয়ে সিঙ্গুরের স্থানীয় তৃণমূল নেতা অমিয় ধাড়ার দাবি, বিজেপি শুধু রাজনীতির জন‍্য এই দাবি করছে। এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজ‍্যে শিল্প বাড়ছে। জুট মিলে লক্ষাধিক মানুষ কাজের জন‍্য ট্রেনিং নিচ্ছেন। তাই ওঁদের যদি সমস্ত কাগজপত্র ঠিক থাকে, তাহলে মুখ‍্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ওঁদের কথা রাখবেন। দিদির ওপর ওঁরা ভরসা রাখুক।