হুগলি: এ দিকে এই বিতর্কের মধ্যেই এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক। কার্যত অস্বস্তিতে তৃণমূল! কখনও রাজনীতির আঙিনায় এসে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন বলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। কখনও, আবার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বন্দুক দেখিয়ে ভোটে জিতলে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে না। এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে, ফের বিস্ফোরক বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী (Manoranjan Byapari)।
বিধানসভা ভোটের আগে, তৃণমূল ছাড়ার ও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার যে হিড়িক পড়েছিল আবার, ভোটের ফল বেরোতেই শুরু হয় উল্টো স্রোত! মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী, বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়।
একে একে অনেকেই তৃণমূল দফতরে ফিরেছেন। তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। এই প্রত্যাবর্তন নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই তাঁদের অসন্তোষ আগেই স্পষ্ট করেছিলেন। এবার, সেই কথা শোনা গেল বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর গলায়।
বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর কথায়, ১৫৩ জন গুণেছিলাম, তার পর আর গুণতে পারিনি। তখন মনে হয়েছিল এই বেইমান, বিশ্বাসঘাতক, মীরজাফরের দল বাংলাটাকে যারা ধ্বংস করতে চায়, তাদের মুখের মতো একটা জবাব দিতে হবে। লড়তে হবে। এটাই হয় চিরকাল, এই যাঁরা সুবিধাভোগী, ধান্দাবাজ তাঁরা এটাই করে। যখন যেদিকে দেখে পাল্লা ভারী, সেদিকেই তাঁরা ঝুঁকে যায়। যখন বিপন্ন সময়, যখন বাংলার বিপন্ন সময়, বাঙালির বিপন্ন সময়, তৃণমূল দলের বিপন্ন সময়, সেই সময় যাঁরা দল ছেড়ে চলে গেল, আজকে তৃণমূলের সুদিনে যাঁরা ফিরে আসছে, তাঁদের সুবিধাভোগী ছাড়া আর কী বলা যায়?
ক’দিন আগেই, দলবদল নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, তবে এটা ঠিক, আমার কাছে একটা প্রতিবাদ থাকেই, যে ’২১ সালে ওরকম জেতার পর, আমরা একের পর এক লোকদের কেন নিয়ে নিচ্ছি? এটা দুঃখ হচ্ছে আমার। একের পর এক লোকদের, একের পর এক পুরনো, যারা শেষ করে গেছে পার্টিটাকে, তাদের নেওয়া হচ্ছে। এটা আমার একটা প্রতিবাদ থাকবে।
বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ব্যক্তিগত জীবন বৈচিত্রে ভরা। দেশভাগের পর শরণার্থী শিবিরে জীবন কাটিয়েছেন, দিন মজুরি করেছেন, রিকশা চালিয়েছেন, স্কুলে রান্নার কাজ করেছেন, নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে জেল অবধি খেটেছেন। আবার জীবনের কঠিন সংগ্রামের পথ বেয়ে উঠে আসা এই মানুষটার হাত থেকেই বেরিয়েছে বহু মূল্যবান লেখা।
মহাশ্বেতা দেবীর রিকশ টানতে টানতেই জন্ম নিয়েছে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ! অবহেলিত মানুষদের জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর সাহিত্যে। দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির প্রথম চেয়ারপার্সন থেকে আজ তিনি রাজনীতিতে বিধায়ক
হুগলির বলাগড়ের মতো বিধানসভা কেন্দ্র যেখানে লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল...সেই তাঁকেই এই আসন থেকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! জিতে চমক দিয়েছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী! সেই মনোরঞ্জনই এদিন দুর্নীতি নিয়েও মুখ খুলেছেন।