সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর (হুগলি) : এ এক অভিনব দৃশ্য। জগদ্ধাত্রীর বরণ করছেন পুরুষরা। তাও আবার নারীর বেশে। আর এই দৃশ্য দেখতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিড় জমান মানুষ। এবারও সেই প্রথার অন্যথা হল না।
কথা হচ্ছে, ভদ্রেশ্বরে তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী পুজোর। ১৩ জন পুরুষ ঘোমটা পরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বরণ করলেন। উলু আর শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল ঠাকুর দালান, আর এই বরণ দেখতে করোনা বিধি না মেনেই উপচে পড়ল ভিড়।
ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলায় জগদ্ধাত্রী পুজোয় অংশ নিলেও, দশমীর বরণে মেয়েরা থাকেন না। যুগযুগ ধরে এই রীতিই চলে আসছে তেঁতুলতলার পুজোয়। নবমী পুজো আর দশমীর বরণ অনুষ্ঠান দেখতে বহু মানুষ হাজির হন। মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত থাকে।
শুনেছেন, এতদিন দেখা হয়নি। এবারই প্রথম পুরুষদের নারীর বেশে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বরণ করা দেখতে আসেন সোনা ভাদুড়ি। হাওড়া থেকে। তিনি বলেন, আমার ননদের বিয়ে হয়েছে এখানে। তাই তেঁতুলতলায় এলাম। মা খুব জাগ্রত শুনেছি। তাই দেখলাম। কত লোক। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় নারীর বেশে পুরুষদের বরণ করা। এটা কোথাও দেখিনি।
প্রচলিত মতে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুরের মেয়ের বাড়ি গৌরহাটিতে একসময় হতো জগদ্ধাত্রী আরাধনা। তাঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই পুজো চলে আসে ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলায়। বাড়ির পুজো সর্বজনীন রূপ পায়। সেসময় বাড়ির মেয়েরা পর্দানসিন ছিলেন। বাইরে বেরোতেও ভয় পেতেন। বাইরে বেরিয়ে পুজোয় অংশ নিতেন না। কিন্তু প্রতিমা বরণ তো মেয়েরাই করেন, সেই কাজ হবে কী করে ? বিসর্জনের আগে তাই পুরুষরাই কাপড় পরে মহিলা সেজে বরণ করা শুরু করেন। সেই প্রথা আজও মেনে চলেছে তেঁতুলতলা বারোয়ারি।
চন্দননগরের পাশাপশি ভদ্রেশ্বরে ২২৯ বছর ধরে হয়ে আসছে জগদ্ধাত্রী পুজো। তেঁতুলতলার বারোয়ারির এক কর্মকর্তা বলেন, বারোয়ারির পুজো যাঁরা করতেন, সেই পুরোহিতরা বরণ করতেন। এখন ১৩ জন পুরুষ সদস্য কাপড় পরে বরণ করেন। যা দেখতে বহু মানুষ সকাল থেকে ভিড় করেন মন্ডপে। তেঁতুলতলার পুজো এতটাই জাগ্রত। মানুষের বিশ্বাস, এখানে মানসিক করলে তা পূরণ হয়। তাই পুজো দিতে ঢল নামে ভক্তদের।