হুগলি: আজ ২৫ শে বৈশাখ সারা দেশ জুড়ে পালন করা হচ্ছে রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব ( Rabindra Jayanti 2023)। ঠিক তখনই ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত চুঁচুড়া দত্তভিলায়। অবহেলা আর অনাদরে পড়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত এই ভাড়াবাড়ি। ১৮৭৯ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘসময় এই বাড়িতেই বসবাস করেছেন ঠাকরবাড়ির পরিবারের সদস্যরা। একসময় এই বাড়ি চুঁচুড়া শহরের ঠাকুরবাড়ি বাগানবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু আজ সেখানে নেই কোনও আনন্দ উৎসবের ছোঁয়া।


 এই বাড়ির বারান্দায় বসে গান গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ 


কোনও সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ ও নেওয়া হয়নি রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব পালন করতে। একসময় এই দত্ত ভিলাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। বাড়ির বারান্দায় বসে রবীন্দ্রনাথ নিজে গান গেয়েছেন ।আজ সেই বাড়িতেই ধুলো জমেছে ঘরের আনাচে-কানাচে, ঘরের বিভিন্ন জায়গা থেকে খসে পড়ছে চুন বালি। গঙ্গাবক্ষ দিয়ে স্টিমারে করে এসে উঠেছিলেন দত্তভিলায় সেই জায়গাতেও গজিয়েছে আগাছা, জঙ্গলে ভরেছে বাড়ির আনাচ কানাচ। বিভিন্ন পত্রপত্র পত্র পত্রিকা লেখা থেকেই জানা যায় এই বাড়িতেই থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। সেই বাড়ি আজ বিস্মিত।


দীর্ঘদিন এখানে রবীন্দ্রনাথ ও ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা এখানে ভাড়া থাকতেন


যদিও চুঁচুড়ার বেশ কিছু রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষ তারা এগিয়ে এসেছেন রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে। রবীন্দ্র ভেলার পাশেই গঙ্গারপাড়ে অপর একটি বাড়ির ছাদে সেখানেই রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব পালন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রবীন্দ্র অনুরাগী সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পঁচিশে বৈশাখ দিনটি রবীন্দ্র স্মৃতিবাহিত জায়গা গুলিতে রবীন্দ্র শয্যায় সজ্জিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় দীর্ঘদিন চুঁচুড়া শহরের দত্ত ভিলায় রবীন্দ্রনাথ ও তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বাড়ির একাধিক পরিবারের সদস্য তারা এখানে ভাড়া থাকতেন । কোনও সরকারি বা বেসরকারি ভাবে এখানে কোনও অনুষ্ঠান হয় না । এটা চুঁচুড়াবাসী হিসেবে লজ্জার।


রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিতে এই বাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে


রবীন্দ্রনাথ বা দেবেন্দ্রনাথের স্মৃতিতে এই বাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে। একসময় রবীন্দ্রনাথ পুরস্কৃত হয়েছিলেন পিতা দেবেন্দ্রনাথ এর কাছে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ দুটি কবিতা লিখে জীবনস্মৃতিতে ব্যক্ত করেছেন তিনি পিতার কাছে হাসির পাত্র হয়েছিলেন। যুবা বয়সে আমি তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলাম । ১৮৮৬ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মাগু উৎসব পালন করছেন রবীন্দ্রনাথ।


আরও পড়ুন, জানেন কি রান্নাঘরের এই মশলা জীবন বদলে দিতে পারে ?


আরও পড়ুন, গরমে কোন সরবতগুলি না খেলেই নয় ? কোনগুলি খুবই স্বাস্থ্যকর ? 


রবীন্দ্রনাথকে ডেকে পাঠায় তাঁর বাবা


তাঁর পিতা তখন চুঁচুড়ার দত্তভিলায়। কীভাবে পালিত হয়েছে সেই উৎসব সেটা জানতেই রবীন্দ্রনাথকে ডেকে পাঠায় তার বাবা। তখন স্টিমার ধরে গঙ্গার হয়ে দত্তবিলায় আসেন কবিগুরু। সেখানে দেবেন্দ্রনাথ শ্রোতা হিসেবে এবং রবীন্দ্রনাথ তাকে একের পর এক গান শোনাচ্ছেন। আর তাকে হারমোনিয়ামে সঙ্গ দিয়েছেন তার বাবা। তার মধ্যে একটি গান,'নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছো নয়নে নয়নে',এই গান সমাপ্ত হলে দেবেন্দ্রনাথ বলেছিলেন দেশের রাজা যদি ভাষা জানিত, সাহিত্যের কদর বুঝি তো তাহলে যথাযোগ্য সম্মান দিত। এই বলে তিনি পাঁচশত টাকা উপহারস্বরূপ রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিলেন। যা বাঙালির মনের মণি কোঠায় নোবেল পাওয়ার থেকেও বড় পাওনা। যা বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে চুঁচুড়ার দত্ত ভিলা।