সোমনাথ মিত্র, হুগলি :  যে ছেলে একদিন স্কুল যেতে ভয় পেত, সে ছেলে বড় হয়ে দেশের জন্য এত বড় কাজ করতে পারবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি মা। তাই আজ ছেলের কীর্তিতে যখন সারাদেশ উচ্ছ্বসিত তখন ছেলের গর্বে মায়ের চোখে আনন্দ অশ্রু। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার কাজে তিনিও অন্যতম কারিগর। 


সিঙ্গুরের দৌদীপ খাঁড়া। ছেলের কীর্তিতে গৌরবান্বিত পরিবার।  আগামী দিনেও দেশের জন্য যে কোনও  বিপদেও ঝাঁপাতে দ্বিধা করবেন না তিনি, ভিডিও বার্তায়  জানালেন তিনি। 


সিঙ্গুরের নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা দৌদীপ খাঁড়া । সিঙ্গুর মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি।  এরপর বিজ্ঞান নিয়ে নালিকুল বাণীমন্দির থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি।  হুগলি পলিটেকনিক কলেজ থেকে Diploma in Survey Engineering পড়া।  বর্তমানে কর্নাটকের বেলগাঁওতে একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত তিনি। । সেই সঙ্গে হাওড়ার একটি বেসরকারি কলেজে বি টেকও পড়ছেন তিনি। 


 উত্তরকাশীতে বিপযর্য়ের পর দৌদীপ খাঁড়া ও তার একজন সহকর্মীকে জরুরি ভিত্তিতে  উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। তাঁর উপর দায়িত্ব পড়ে টানেলের ভেতর দিয়ে ক্যামেরা পৌঁছে আটকে পড়া শ্রমিকদের অবস্থান দেখানো। নেমেই কাজ শুরু করে দেয় দৌদীপ। অনেক বধা কাটিয়ে যখন তার পাঠানো ক্যামেরায় ধরা  পড়ে আটকে পড়া ৪১জন শ্রমিকদের ছবি, তখন আশ্বস্ত হয় সরকার এবং নতুন উদ্যেমে  উদ্ধারকার্যে গতি বাড়ায় উদ্ধারকারী দল।


স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবার। এরপর নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ১৭ দিনের মাথায় একে একে উদ্ধার করে আনা হয় একচল্লিশ জন শ্রমিককে।  সেই উদ্ধার কার্যে সিঙ্গুরের যুবক দৌদীপ খাঁড়ার এত বড় ভূমিকার কথা জানতে পেরেই প্রশংসার বন্যা বইছে। ছেলের এই কাজে উল্লসিত সিঙ্গুরের খাঁড়া পরিবারের সদস্যরা।। বাড়িতে বসে ছেলের ছবি টেলিভিশনের পর্দায় দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তার বাবা মা।


দৌদীপের বাবা দীনেশ খাঁড়া জানান, 'উদ্ধারের পর আমরা আনন্দে কেঁদে ফেলি। ছেলে ছবি পাঠাল। আমরাও ঘরে টিভির সামনে হাত তুলে বললাম ভারতের জয়। তার কাজের প্রশংসা করেছেন বিদেশ থেকে আসা এক টানেল গবেষকও। কারণ তাঁর পাঠানো ক্যামেরার ছবি দেখেই মনোবল বাড়ে উদ্ধারকারী দলের । ' 


দৌদীপের মা সবিতা খাঁড়া ও আবেগতাড়িত হয়ে বলেন,' ছোট বেলায় ওর সাথে আমাকে স্কুলে যেতে হত , কারণ ও স্কুলে যেতে ভয় পেত। শিক্ষকরা বলতেন, ও পড়াশোনা করে না। আর এখন সেই  ছেলে দেশের হয়ে এতো বড় কাজ করবে তা কখনও ভাবিনি, গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে।' 


ভিন রাজ্য থেকে দৌদীপ ভিডিও বার্তায় জানান,  এর আগে এত বড়ো উদ্ধার কাজ কখনো করিনি। সমস্ত উদ্ধারকারী দলের  সঙ্গে থেকে কাজ করে  ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করতে পেরে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি ।তার জন্য একজন ভারতীয় ও একজন বাঙালি হিসাবে আমি গর্বিত। কোম্পানিকে ও ধন্যবাদ জানাব আমাকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য'