প্রকাশ সিন্হা, সমীরণ পাল ও প্রবীর চক্রবর্তী, কলকাতা : জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriyo Mallick) পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী দেবাশিস দে-র (Debashish Dey) বাড়িতেও হানা দেয় ED (Enforcement Directorate)। সূত্রের খবর, ওই ব্যবসায়ীর ছেলে কয়েক মাস আগে খাদ্য দফতরে চাকরি পেয়েছেন। যার সঙ্গে আবার মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের যোগাযোগ রয়েছে বলে সূত্রের দাবি।


রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ব্য়বসায়ী বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর থেকেই, তাঁর সঙ্গে এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠে আসছিল। বাকিবুরের সঙ্গে প্রাক্তন খাদ্য়মন্ত্রী জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিকের ছবি দেখিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি দাবি করেছিলেন, 'এর সঙ্গে বাকিবুর রহমানের ২০১২ সাল থেকে সম্পর্ক। তাঁর স্ত্রীর নামে নোটবন্দির সময় সল্টলেকের ব্যাঙ্কে ৪ কোটি টাকা বদল করেছিলেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রী এবং ওঁর পিএ অভিজিৎ ...তাঁরা নিউ দিঘায় এবং বিভিন্ন জায়গায় কতগুলি হোটেল করেছেন...তার খবর কি আপনার কাছে থাকে ?'


রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্য়মন্ত্রী জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিক। জোড়া বাড়িতে ২০ ঘণ্টার ম্য়ারাথন তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল গভীর রাতে বনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। রাত ৩টে ২৩ নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। এর পর থেকেই উঠে আসছে নানা তথ্য। নানা হলে প্রশ্ন উঠছে, রেশন দুর্নীতির সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম জড়িয়ে গেল কীভাবে ? 


২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। অন্যদিকে রেশন দুর্নীতি মামলায় রাজ্য পুলিশই ২০২০, '২১ ও '২২ সালে ৩টি FIR করেছিল। FIR হয়েছিল বাকিবুর রহমানের সংস্থার নামে। যদিও, ED সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, FIR দায়ের হলেও, গভীরে গিয়ে তদন্ত হয়নি। যে কারণে আগে বাকিবুরকে গ্রেফতারও করা হয়নি।

ED সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, এতদিনে অনেকের বয়ানেই তাঁর (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের) নাম উঠে এসেছে। সেই অনুযায়ী, গতকাল মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে, এরকম বেশ কয়েকজনের বাড়িতে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি। যাদের মধ্যে যেমন, ব্যবসায়ী দেবাশিস দে-র বেলেঘাটার বাড়িতে যান ED অফিসাররা।

সূত্রের দাবি, প্রথমে ব্যবসায়ীর ছেলে রনিত দে-র খোঁজ করেন ED-র অফিসাররা। কয়েক মাস আগে খাদ্য দফতরে চাকরি পেয়েছেন রনিত। সূত্রের দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্ত সহায়ক অমিত দে-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে ব্যবসায়ী দেবাশিস দে-র। ED সূত্রে দাবি, রেশন দুর্নীতি মামলায় রনিতেরও যোগ থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তল্লাশি নিয়ে এদিন, তাঁকে প্রশ্ন করা হলেও কোনও উত্তর দেননি ধৃত বাকিবুর। 


এই ইস্যুতে এবার শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এভিডেন্স যেমন আপনারা তৈরি করেন, আমার কাছেও অরিজিনাল এভিডেন্স আছে। পেনড্রাইভও আছে। আমরা সাংবিধানিক চেয়ারকে শ্রদ্ধা করি।' 

কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেছেন, 'উনি অবচেতন মনে সত্য়টা প্রকাশ করে ফেলেছেন। ওনার হাতে এভিডেন্স আছে প্রকাশ করুন না। ব্ল্য়াকমেলিংয়ের রাজনীতি যেমন বিজেপিও করে, তেমনই তৃণমূলও করে। একই বৃন্তে দুটি ফুল, একটা পদ্মফুল, একটা জোড়া ফুল। এরা ব্ল্য়াকমেলের রাজনীতি করে।'

এই পরিস্থিতিতে তদন্ত কি নিজের পথে এগোবে, না কি রাজনীতির খেলায় ধাক্কা খাবে? হঠাৎ তৎপর, হঠাৎ ধীর গতি হবে না তো? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!