কলকাতা: জ্যোতিপ্রিয়র পিএ-কে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ ইডির। প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সিজিও থেকে বেরোলেন অমিত দে। 'রেশন দুর্নীতিতে কীভাবে লাভবান জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক?' মন্ত্রীর মাধ্যমে কারা লাভবান হয়েছিলেন? জানতে চেয়েছে ইডি। জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে কারা কারা দেখা করতে আসতেন? জানতে মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ককে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। অমিত দে-র মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখছে ইডি, নজরে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট। ইডি সূত্রে দাবি রেশন দুর্নীতির টাকা ঢুকেছে অমিতের অ্যাকাউন্টে। নামে-বেনামে প্রচুর সম্পত্তি অমিতের নামে, আছে রিসর্টও। জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অভিজিৎ দাসকেও সাড়ে ৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ ইডির। কেন্দ্রীয় সংস্থার আরও দাবি, অভিজিৎ দাসের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে 'বালু দা' লেখা মেরুন ডায়েরি। যাতে লেখা কোটি কোটি টাকা লেনদেনের হিসেব। গতকালও অমিত দে, অভিজিৎ দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি।


বাংলায় যেন দুর্নীতির ঘনঘটা! প্রায় প্রতিদিনই তল্লাশি, অভিযান, গ্রেফতারি। নিত্য় নতুন অভিযোগ। কখনও পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়, কখনও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়। গরু পাচারকাণ্ডঅনুব্রত মণ্ডল, তো শিক্ষা দুর্নীতিতে মানিক ভট্টাচার্য থেকে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্য়াণময় গঙ্গোপাধ্য়ায়, শান্তিপ্রসাদ সিনহার মতো একদা শিক্ষার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা থেকে একদা তৃণমূলের যুব ও দাপুটে নেতা কুন্তল ঘোষ থেকে শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। 


আবার পুর দুর্নীতিতে অয়ন শীল থেকে নিয়োগকাণ্ডে কালীঘাটের কাকু সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। আর এবার যুক্ত হল রেশন দুর্নীতি। বাকিবুর রহমানের পর এবার প্রাক্তন খাদ্য়মন্ত্রী জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিক রেশন বণ্টনে দুর্নীতি মামলায়, শনিবার ফের প্রায় ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হল, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্ত সহায়ক অমিত দে এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন CA এবং ব্যবসায়ী অভিজিৎ দাসকে।


সূত্রের দাবি, এদিন, তাদের মোবাইল ফোন খোলা হয়। করা হয় তথ্য সংগ্রহ। এর পাশাপাশি, দু-জনের বয়ান রেকর্ডও করা হয়। বৃহস্পতিবার, দু-জনের বাড়িতেই তল্লাশি চালানো হয়েছিল। সূত্রের দাবি, অভিজিৎ দাসের বাড়িতে তল্লাশিতেই হদিশ মেলে মেরুন ডায়েরির। যার উপরে লেখা ছিল, বালুদা। 


এ নিয়ে শুক্রবার আদালতে, ইডির আইনজীবী বিচারককে বলেন, একটি ডায়েরির হদিশ মিলেছে। তাতে যা তথ্য মিলেছে, তা চমকে দেওয়ার মতো। ED সূত্রে দাবি, ডায়েরির ভিতরে লেখা, কোটি কোটি টাকার লেনদেনের হিসেব! এই পরিস্থিতিতে প্রায় এক দশকের ব্যবধানে, ফের রাজ্য রাজনীতির চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে একটি 'ডায়েরি'। 


সারদাকাণ্ডের সময় আলোচনা হত 'লাল ডায়েরি' নিয়ে।  আর, এখন রাজনীতি আলোড়িত হচ্ছে 'মেরুন ডায়েরি' ঘিরে। এই প্রসঙ্গে এদিন, সোশাল মিডিয়ায় এই ছবিটি পোস্ট করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাতে লেখা, রেশন কেলেঙ্কারি বিচার পাক, মেরুন ডায়েরি পথ দেখাক। এরপরই, বিজেপির রাজ্য সভাপতি পোস্টে লেখেন,কে, কত, কবে নিয়েছে? 'বালুদা' লেখা কুখ্যাত মেরুন ডায়েরি খুললেই তৃণমূলের দুর্নীতির শিল্প প্রকাশ্যে আসবে। সব মিলিয়ে এখন, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে 'মেরুন ডায়েরি'।