আবির দত্ত, কলকাতা: মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে কীভাবে চলছিল সাধারণ মানুষের টাকা লুঠ? ইডি সূত্রে দাবি, প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা তোলা হচ্ছিল সাবস্ক্রাইবার কাছ থেকে। কীভাবে ফাঁদ পেতেছিল প্রতারকরা? ইডি সূত্রে দাবি, ই-নাগেটস অ্যাপ ডাউনলোড করলেই ৪৯ টাকার কুপন মিলত। অফার আকর্ষণীয় করে তুলতে ছিল অর্ডিনারি, সিলভার, গোল্ড, ডায়মন্ড - এই চার ধরনের মেম্বারশিপ। গ্রাহকদের টাকা জমা হত ফেডারেল ব্যাঙ্কে। এভাবেই ফাঁদ পেতে গ্রাহকদের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বাজার থেকে তোলা হয়েছিল বলে ইডি সূত্রে দাবি।
মোবাইল গেমিং অ্যাপ ই-নাগেটস নিয়ে ইডি-র কাছে নতুন তথ্য আসে। সূত্রের খবর, লকডাউনের সময় এই অ্যাপের রমরমা বাড়ে। দিনদিন বাড়তে থাকে কয়েকহাজার ইউজারের সংখ্যা। লকডাউনের সময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দিনে ৩-৪ হাজার টাকা রোজগারের টোপ দেওয়া হত। ই-নাগেটস অ্যাপের মাধ্যমে চলত টাকা নেওয়া। কবে কোথা থেকে টাকা তোলা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ইডি-র তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বলে সূত্রের খবর।
গার্ডেনরিচে ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় এবার তৃণমূল কাউন্সিলর-যোগের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। এদিকে, ইডি অভিযান নিয়ে অনেকটাই বদলে গেল এদিনের অবস্থান।
গার্ডেনরিচে বাড়ি থেকে ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় পলাতক মোবাইল অ্যাপ প্রতারণাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত আমির খান। ইডি সূত্রে দাবি, খোঁজ মিলছে না তাঁর বাবা পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার খানেরও। এদিকে এই ঘটনায় উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও। যদিও পুলিশের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
যেন টান টান থ্রিলার! ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ! শনিবার গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডি হানায় উদ্ধার হয়েছে ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। ইডি সূত্রে দাবি, ইতিমধ্যেই পলাতক মোবাইল গেমিং অ্যাপ প্রতারণাচক্রের মূল পাণ্ডা আমির খান। এবার এই ঘটনায় স্ক্যানারে আমির খানের বাবা পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খান। কারণ ছেলের পর, খোঁজ মিলছে না তাঁর বাবারও। ইডি সূত্রে দাবি, তাঁদের বাড়িতে যে এই বিপুল টাকা মজুত করে রাখা হয়েছে, তা ভাল করেই জানতেন পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে শনিবার ইডি অভিযানের পর তেকে গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলির F7 নম্বরের এই বাড়ির দরজা আর খোলেনি! এমনকি ডাকাডাকি করলেও সাড়া মেলেনি।
সাদামাটা এই দোতলা বাড়ি থেকে একটু এগোলেই সার্কুলার রোডে এই হল গেমিং অ্যাপ প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা, পলাতক আমির খানের বাবা নিসার আহমেদ খানের পরিবহণ সংস্থার অফিস, ‘সঙ্গম ট্রান্সপোর্ট’।
স্থানীয়দের দাবি, উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে বাসিন্দা নিসার আহমেদ খান ৩০-৩২ বছর আগে, সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন। বাবা-ছেলে দু’জনেই বেপাত্তা হওয়ায়, প্রশ্ন উঠছে, তাঁরা ভিনরাজ্যে গা ঢাকা দেননি তো? পাশাপাশি এই ঘটনায় উঠে আসছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ।
ইডি সূত্রে দাবি, টাকার টোপ দিয়ে গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ ওঠে ২০২০’র ডিসেম্বরে। ২৬ ডিসেম্বর, পার্ক স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ফেডারেল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ জানানো হয় লালবাজারে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনারের কাছেও। এই পরিস্থিতিতে ২০২১-এর ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের দ্বারস্থ হয় ফেডারেল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তারপর আদালতের নির্দেশে, ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিট থানায় আমির খান ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়।
ইডি সূত্রে আরও দাবি, ২০২০’র মার্চে করোনার বাড়বাড়ন্তের জেরে দেশজুড়ে যখন লকডাউন চলছিল, সেই পরিস্থিতির সুযোগ নেন গেমিং অ্যাপ প্রতারণার মাস্টার মাইন্ড আমির খান। সেইসময় দিন দিন বাড়তে থাকে E-Nuggets অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রতারণার অঙ্কটাও। প্রশ্ন উঠছে, FIR দায়েরের পর দেড় বছর কেটে গেলেও, কেন সক্রিয় হল না পুলিশ? যদিও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সম্পর্কে লালবাজারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।