সুনীত হালদার, মনোজ বন্দ্য়োপাধ্যায়, হাওড়া, পশ্চিম বর্ধমান: পুজোর আগে বেহাল হাওড়া ও পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের একাধিক রাস্তা। হাওড়া পুরসভা এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তায় বড় বড় গর্তে বৃষ্টির জল জমে চলাফেরা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্গাপুর পুরসভার ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডেও রাস্তায় বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় সমস্য়ায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা।
দুই জেলা। একই ছবি। রাস্তায় বড় বড় গর্ত। বড় বড় গর্তে জমে রয়েছে বৃষ্টির জল। খানাখন্দে ভরা রাস্তা। গাড়ি, বাইক নিয়ে বা পায়ে হেঁটে চলাফেরা করাই দায়। হাওড়ার সালকিয়া ধর্মতলা, শিবপুরের শালিমার, বেলগাছিয়া এবং টিকিয়াপাড়ায় বেহাল রাস্তা। যে কোনও সময় ঘটে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই রোজ ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছেন অসংখ্য মানুষ।
হাওড়ার বাসিন্দা সন্তোষ দাস বলছেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা বিভিন্ন জায়গায় খারাপ। কিছু কিছু রাস্তা হাওড়া পুরসভা মেরামত করেছে। কিন্তু, বিভিন্ন রাস্তা দেখা যাচ্ছে অনেক অসুবিধা। সালকিয়া ধর্মতলা রোডে ধর্মতলা বাজার পেরোলে বড় বড় গর্ত। জল জমে থাকে। সাইকেল আরোহী যারা যায় তাদের বিপদ হতে পারে। অন্য়ান্য় জায়গায়ও একই অবস্থা রাস্তায় গর্ত।
হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্য়ান সুজয় চক্রবর্তীর কথায়, পুজোর আগে আমাদের প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা, প্রথম পর্যায়ে ৭ কিলোমিটার, তারপরে ৫ কিলোমিটার এই ভাবে আমরা রাস্তাকে ঠিক করার পরিকল্পনা হয়েছে। প্রথম ধাপের কাজের টেন্ডার হয়েছে। কাজও শুরু হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে প্রক্রিয়া চলছে। শুরু হবে। প্রায় ৭ কোটি টাকার রাস্তা পুজোর আগে আমরা করব।
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর পুরসভার ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিধাননগর এলাকা। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত এই রাস্তা অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বেহাল বিধাননগর মেইন রোড সহ সংলগ্ন রাস্তা।
দুর্গাপুরের বাসিন্দা সোমদত্তা মুখোপাধ্যায় বলছেন, খুব খারাপ অবস্থা। মানে সাংঘাতিক খারাপ। কোনও রাস্তা দিয়েই বিধাননগরের যাতায়াত করা যাচ্ছে না। সমস্ত ভিতরকার রাস্তা, সিটি সেন্টার কানেকটিং রোড, ন্য়াশনাল হাইওয়ের প্য়ারালাল রাস্তা, সালারপুরিয়ার মতো একটা কমপ্লেক্স আছে এখানে। রাস্তা যদি ঠিক না হয় আগামীদিনে চলাফেরা করা খুব অসুবিধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মেয়াদ শেষ হয়েছে দুর্গাপুর পুরসভার। ভোট না হওয়ায় প্রশাসকমণ্ডলী বসিয়ে চলছে পুরসভা।
দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর তৃণমূল সদস্য় রাখি তিওয়ারির কথায়, আমরা যে ৫ জন সদস্য় রয়েছি চেয়ারপার্সন সহ। আমাদের ঠিক হয়েছে ম্য়াডাম একটা ফাইল রেডি হয়ে গেছে যতগুলো রাস্তা আছে পুজোর আগে মহালয়ার আগে কাজ হয়ে যায়। যেগুলো একটু ভেঙে গেছে প্য়াচ ওয়ার্ক হয়। যেগুলো ভেঙে গেছে রিপেয়ারিং করতে হবে। ফাইল রেডি হয়ে আছে। বৃষ্টিতে পিচের রাস্তা করলে ভেঙে যায়। মাপঝোক সব হয়ে আছে। বৃষ্টি কমলেই কাজ হবে।
পশ্চিম বর্ধমানের বিজেপির জেলা সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দাবি, যে রাস্তা দিয়ে যাবেন বিধাননগরের রাস্তা হোক, সঞ্জীব সরণি থেকে জেসব গেট পর্যন্ত রাস্তা হোক এবং প্রত্যেকটা রাস্তা নারকেল ফাটিয়ে উদ্বোধন হয়েছে। বিধাননগরে আইটিআইয়ের সামনে আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি। আমাদের অবরোধের পর দেখলাম প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্য়ান রাস্তা উদ্বোধন করলেন। প্রায় ৬০ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে এখনও সেখানে এক লরি স্টোন চিপস বা রাস্তা তৈরির সরঞ্জাম বা রাস্তা তৈরির সংস্থা কারুর দেখা নেই।
পশ্চিম বর্ধমানের সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য় পঙ্কজ রায় সরকারের পাল্টা দাবি, পুজোর আগে না প্রশ্নটা হচ্ছে নির্বাচনের আগে এরা করার পরিকল্পনা করেছে। ২০০টা রাস্তার তালিকা আমরা জমা দিয়েছি। যা এখনও বেহাল। আরও আছে। যে ওয়ার্ডে কর কালেকশন হয় সেখানে হেঁটে গেলে পা মচকে যায়। পুজোর আগে কিছু কাজ হবে। পিচ ছড়ানো হবে। আর টাকা চলে যাবে তৃণমূলের লোকেদের হাতে। কবে বেহাল রাস্তা সারাই হয় এখন সেদিকেই তাকিয়ে দুই জেলার বাসিন্দারা।