সুনীত হালদার ও সৌমিত্র রায়, হাওড়া: প্রায় চার ঘণ্টা ধরে উদ্বেগ, হয়রানি। হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় জলের ট্যাঙ্কের মাথা থেকে অবশেষে নামানো হল সেই যুবককে। তবে নিতে নেমে তিনি যা জানালেন, তাতে কার্যতই ভিরমি খাচ্ছেন সকলে। ওই যুবক জানিয়েছেন, নিচে বড্ড গরম। তাই হাওয়া খেতে ন'তলা বাড়ির সমান, ৯০ ফুট উঁচু জলের ট্যাঙ্কের উপর উঠেছিলেন তিনি।
হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন জলের ট্যাঙ্কের মাথায় উঠে পড়েন ওই যুবক
রবিবার বিকেল ৫টা নাগাদ প্রথম ওই যুবকেকে হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্স লাগোয়া জলের ট্যাঙ্কের মাথায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেন পথচারী এবং যাত্রীরা। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ খবর দেয় দমকল বাহিনীকে। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় RPF, GRP-ও। এর পরই শুরু হয় উদ্ধারকার্য। স্টেশনের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। উদ্ধারকার্য চালাতে ঘিরে ফেলা হয় গোটা এলাকা। চড়া আলো সব নিভিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ওই ব্যক্তির নজর এদিক ওদিক না পড়ে, তাঁকে বুঝিয়ে নামতে রাজি করানো যায়। নীচে পাতা হয় ২টি জাল, যাতে কোনও অঘটন না ঘটে।
এর পর হাইড্রলিক মই বেয়ে উপরে ওঠেন চার দমকলকর্মী। কিন্তু নামতে রাজি হননি ওই যুবক। বরং বিপজ্জনক ভাবে জলের ট্যাঙ্কের কিনারা ধরে ঘোরাফেরা করতে থাকেন তিনি। দমকল সূত্রে খবর, এর পর তিনজন উদ্ধারকারী খালি গায়ে ট্যাঙ্কের ছাদে উঠে তিনদিক ঘিরে বসে পড়েন। ওই যুবক কারও কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি। শুধু হেসেছেন।শেষপর্যন্ত আরও তিনজন দমকল কর্মী হাতে বড় দড়ির ফাঁস নিয়ে ওপরে যান। যুবকের দিকে দড়ির ফাঁস ছুড়ে দিয়ে জাপটে ধরেন তাঁরা। সেই অবস্থায় নামিয়ে যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় গোলাবাড়ি থানায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই যুবকের নাম বিট্টু মজুমদার, বাড়ি অসমের লামডিংয়ে। কাজের জন্য গিয়েছিলেন গোয়া। সেখান থেকে তিনি মাসখানেক আগে হাওড়া স্টেশন চত্বরে এসেছিলেন। যুবকের দেওয়া এই তথ্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি, নেওয়া হচ্ছে মনোবিদদের পরামর্শ।
উদ্ধারকার্যে নামে পুলিশ, দমকল, আরপিএফ এবং জিআরপি
এর আগে, সম্প্রতি মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস- এর ৮ তলার কার্নিশ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল রোগীর। তাই এ দিন ওই যুবককে দেখে প্রমাদ গুনছিলেন অনেকেই। তবে সেই মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো গেল হাওড়ায়। ৩ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের চেষ্টায় ন'তলা বাড়ির সমান উঁচু জলের ট্যাঙ্কের ওপর থেকে নিরাপদে নামানো সম্ভব হল বছর ২৮-এর ওই যুবককে।