সুনীত হালদার, হাওড়া : রাত পোহালেই সরস্বতী পুজো। সেই সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন্স ডেও। প্রতি বছরের মতো এবারেও গোলাপ ফুলের চাহিদা তুঙ্গে। বছরের এই সময়টা ফুল ব্যবসায়ীদের লক্ষ্মীলাভের সময়। কিন্তু এবছর গোলাপ চাষিদের কার্যত মাথায় হাত। হাওড়ার বাগনানে বিখ্যাত গোলাপ-চাষ। এই উপলক্ষ্যে প্রতিবছরই চাষিরা গোলাপ চাষ থেকে মোটা টাকা লাভ করেন। কিন্তু এই বছর এক ধরনের 'ভাইরাসের আক্রমণে' নষ্ট হয়ে গেছে বিঘের পর বিঘে ফুল। এর ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা। বুঝেই উঠতে পারছেন না কীভাবে এই ক্ষতি সামাল দেবেন।
বাগনানের দু'নম্বর ব্লকের ওরফুলি, হেলেদ্বীপ, কাঁটাবেড়িয়া এবং তার আশপাশ গ্রামের ফুল চাষিরা কয়েক হাজার বিঘা জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করেন। লাল, হলুদ, গোলাপি, সাদা, রকমারি গোলাপে ভরে থাকে বিঘের পর বিঘে জমি। প্রতি বছর সরস্বতী পুজো এবং ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষ্যে লাল গোলাপ এবং হলদে গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। আর তাই চাষিরা গোলাপ বিক্রি করে অনেক আয় করে থাকেন।
তাদের চাষের জমির গোলাপ চলে যায় কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজার, পশ্চিম মেদিনীপুরের কোলাঘাট বাজার, পূর্ব মেদিনীপুরের দেউলিয়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন বড় বড় ফুল বাজারে। সেখান থেকে লাল গোলাপ যায় দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, পটনা সহ দেশের বড় বড় শহরে। রং, আকৃতি এবং গন্ধের জন্য এই অঞ্চলের গোলাপের সৌন্দর্যের কদর করেন অনেকেই। চাষিরা গত বছরেও একটি গোলাপ ফুল ১৩ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন । তাদের মুখে ফুটেছিল চওড়া হাসি। কিন্তু এ বছর ছবিটা একদমই আলাদা।
কিন্তু এই বছর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। একটু বেশি শীত পড়তেই মাঠে নষ্ট হয়ে গেছে গোলাপ গাছ এবং ফুল। গোলাপ চাষিরা জানিয়েছেন এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে গাছের পাতায় কালো ছোপ দেখা দিয়েছে। অকালে ঝরে গেছে পাতা। গাছে ফুল এলেও পাপড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এখানকার ফুলের চাহিদা থাকলেও এবারে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন চাষিরা।
রাজেন্দ্র ভৌমিক নামে এক ফুল চাষি জানিয়েছেন তিনি লাভের আশায় এবারে টাকা ধার করে গোলাপ চাষ করেছিলেন। ভেবেছিলেন একটা গোলাপ ১৫ থেকে ১৮ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করবেন। কিন্তু মাঠের ফুল মাঠে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদের মাথায় হাত। কীভাবে এই ক্ষতি তারা সামাল দেবেন তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না।
পুলক ধাড়া নামে অন্য এক চাষী বলেন বাগনানের এই অঞ্চলে তাদের জীবিকা এই ফুল চাষ। হঠাৎ ভাইরাসের আক্রমণে গাছের প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেছে। রাজ্য সরকারের উদ্যান পালন দফতর এবং কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা এখানে এলেও তারাও রোগ নির্ণয় করতে পারছেন না। কীটনাশক স্প্রে করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
ভ্যালেন্টাইনস ডে এবং সরস্বতী পুজো এ বছর একই দিনে পড়েছে। ফলে লাল গোলাপের চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু বাজারে চাহিদা অনুযায়ী গোলাপের জোগান দিয়ে উঠতে পারছেন না বাগনানের চাষিরা। আর তাই বাজারে গোলাপ এবার কিনতে হবে চড়া দামে।
আরও পড়ুন :