কলকাতা: বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ গাঁজা নিয়ে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সাঁকরাইলের বিজেপি নেতার। তাঁর দাবি, বাবার আমল থেকেই তাঁদের গাঁজার ব্যবসা। থানাও তাঁদের সেই ব্যবসার কথা জানত। তবে তৃণমূল নয়, নিজের দলের লোকই তাঁকে ফাঁসিয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি। গতকাল বিজেপি-র পঞ্চায়েত সদস্যা রূপা রায়ের বাড়ি থেকে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। (BJP Leader Marijuana Business)
সাঁকরাইলের কান্দুয়া পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যা রূপা রায়। গতকাল তাঁর বাড়ি থেকে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার হন নেত্রীর স্বামী নিমাই রায়-সহ মোট তিন জন। ধৃত নিমাই-ই বিজেপি-র কিষাণ মোর্চার নেতা। তিনি জানিয়েছেন, গাঁজা তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা বলে। (Howrah News) সংবাদমাধ্যমে নিমাই বলেন, "২০১৮ সালে আমার স্ত্রী ভোটে দাঁড়িয়েছিল। এই ব্য়বসা আমাদের তাও আগে থেকে। এলাকার সকলে জানেন, আমি এই ব্যবসা করি। আমি নই, আমার বাবার ব্যবসা। ২০১৮ সালে সরেও এসেছিলাম। কিন্তু ধারদেনা মেটাতে পারিনি বলে আবার ফিরে আসি। এই ব্যবসা করি বলে স্ত্রীও চলে গিয়েছে।"
গাঁজার টাকাতেই তাঁদের সংসার চলে বলেও স্বীকার করেন নিমাই। তাঁর কথায়, "বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল থেকে আনতাম গাঁজা। মজুর ছিল, তারাই বিক্রি করত। আমরা তিন ভাই। খেতে পেতাম না। এই ব্যবসায় ছোট থেকেই। বড় হয়েছি এই গাঁজার টাকায়, আমার মেয়ে এখন পড়াশোনাও করছে এই গাঁজার টাকাতেই। এলাকার সকলে জানত আমাদের গাঁজার ব্যবসার কথা। থানাও জানত। আজ যে ঘটনা ঘটল, তা রাজনীতির চক্করে।"
তবে তৃণমূল নয়, বিজেপি-র লোকজনই তাঁকে ফাঁসিয়েছেন বলে দাবি নিমাইয়ের। তাঁর বক্তব্য, "আমি এত বড় নেতা নই যে আমার জন্য মিডিয়া আসবে। আমি খবর পাচ্ছিলাম যে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। আমারই দলের লোক করেছে। তৃণমূল করেনি। আমি একরাত ছিলাম না, তাতে এই। আমি চাই গোটা হাওড়ায় ছড়াক বিষয়টি। আমিও দেখছি কী করতে পারি।"
ওড়িশা থেকে ওই গাঁজা এনে কলকাতা, হুগলিতে পাচারের ছক ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি সামনে আসতেই তৃণমূলের তরফে বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করা হয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর অধিকারী, দলের সাংসদ দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ধৃতের ছবিও পোস্ট করে তারা। কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধেই তদন্ত হওয়া উচিত বলে পাল্টা দাবি করেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত।
এদিন নিমাই গাঁজার ব্যবসার কথা স্বীকারের পর বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "এই ব্যবসার কথা জানত পুলিশ। কিন্তু এখন বিজেপি-কে রাজনৈতিক ভাবে কালিমালিপ্ত করতে অস্ত্রটা ব্যবহার করল। তার মানে এটা পরিষ্কার যে, পুলিশের সহযোগিতায় রাজ্য জুড়ে নিষিদ্ধ ব্যবসা চলছে। খেটে খাওয়া পরিবার এই ব্যবসা করেই বেঁচেছিল। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কেমন ভাবুন, অপরাধ জেনেও এই ব্যবসায় এগোচ্ছেন মানুষ।"
এ নিয়ে তৃণমূল সাংসদ রাহুল সিনহা বলেন, "বিজেপি-র জেলা কিষাণ মোর্চার সহ-সভাপতি নিমাই। দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, স্বপন দাশগুপ্ত, সজল ঘোষেদের সঙ্গে ওঁর ছবি দেখেছি। এর আগে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর সঙ্গে কয়লা পাচারকারী, কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে ছবি তুলেছেন, তাঁর হোটেলে থেকেছেন। বিজেপি-র যুব মোর্চার নেত্রী পামেলা গোস্বামী ৯০ কেজি কোকেন রাখায় আটক হন। তাঁর সঙ্গেও ছবি ছিল সুকান্ত মজুমদারের। এতে প্রমাণ হয়, দুর্নীতিগ্রস্ত লোকেরাই বিজেপি-র সম্পদ।"