কলকাতা: হাওড়া। জেলা থেকে কলকাতা প্রবেশের পথে কার্যত সেতুবন্ধন করেছে এই জেলা। বাড়ির পাশের এই শহরে যেমন মফঃস্বলের আস্বাদ রয়েছে, তেমনই রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও। টুকরো টুকরো ইতিহাস, মন্দির.. এই শীতকালে একটা ছুটির দিন ঘুরে আসতেই পারেন হাওড়া ও তার আশেপাশের অঞ্চল। কী কী দেখবেন, কীভাবে যাবেন, যাবতীয় হদিশ দিচ্ছে এবিপি লাইভ। 


কী কী দেখবেন:


 


হাওড়া ব্রিজ


হাওড়া বলতেই প্রথম যে ছবিটা মাথায় আসে সেটা হাওড়া ব্রিজ (Howrah Bridge)।  ১৯৪২ সালে অর্থাৎ ইংরেজদের আমলে তৈরি হওয়া এই ব্রিজ সেই সময়ে ছিল জেলা ও কলকাতার মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। গঙ্গার ওপর তৈরি হওয়া এই ব্রিজ একসময় মাঝখান থেকে ভাগ হয়ে যেত। জাহাজ চলাচল করার জন্যই ছিল এই ব্যবস্থা। এখন আর সেই ব্রিজ ভাগ না হলেও, অবাক করে এই প্রাচীন ব্রিজের স্থাপত্য। বর্তমানে আলোর খেলায় সন্ধেবেলা যেন আরও মোহময়ী লাগে হাওড়া ব্রিজকে। হাওড়া স্টেশনের লাগোয়া এই ব্রিজে পৌঁছে যেতে পারেন স্টেশন থেকে পায়ে হেঁটেই।


সাঁতরাগাছি ঝিল


হাওড়ার বুকে যে পরিযায়ী পাখিদের মেলা বসে, তা হয়তো জানেন না অনেকেই। সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের কাছের এই বিশাল ঝিলে শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা চলে। ইদানিং আলিপুর চিড়িয়াখানা এড়িয়ে অনেক পরিযায়ী পাখিই আসে এই ঝিলে। সাঁতরাগাছি ঝিলে যাওয়ার সেরা সময় ডিসেম্বর ও জানুয়ারি। সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে রিক্সা বা টোটো নিয়ে এই ঝিলের ধারে কাটিয়ে আসতেই পারেন একটা ছুটির সকাল।


গাদিয়ারা


হুগলি আর রূপনারায়ণ নদীর তীরে হাওড়ার অন্যতম জনপ্রিয় পিকনিক স্পট গাদিয়ারা। শহরের বুকে একটুকরো গ্রাম বেঁচে রয়েছে এই ঠিকানায়। একদিন থাকলে রূপনারায়ণের বুকে সূর্যোদয়ের শোভা আপনাকে মুগ্ধ করবে। গাদিয়ারা গেলে সূর্যাস্ত দেখা কিন্তু আবশ্যক। সোনালি আভায় যখন দুই নদীর জল রাঙা হয়ে যায়, সেই দৃশ্য মনে রাখার মতোই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ছাড়াও গাদিয়ারায় রয়েছে লর্ড ক্লাইভের তৈরি করা দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ও লাইট হাউজ। 


বেলুড় মঠ


হাওড়ার অন্যতম জনপ্রিয় ও পরিচিত স্থান বেলুড় মঠ। শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও সারদামায়ের স্মৃতি বিজড়িত এই মঠ একেবারে গঙ্গার ধারে অবস্থিত। একসময় এখানে এসে কিছুদিন ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। শীতে বেলুড়মঠের অন্যতম আকর্ষণ ফুলও। গোটা শীতকাল জুড়ে এখানে বিভিন্ন মরসুমি ফুলের চাষ হয়। সন্ধে অবধি এই মঠে কাটিয়ে আসার সময় থাকলে মূল মন্দিরের ভিতরে সন্ধ্যারতি দেখে আসতে পারেন। হাওড়া স্টেশন থেকে বেলুড় মঠে যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যাবে। গাড়ি করে জিটি রোড ধরেও পৌঁছে যাওয়া যায় এই মঠে। 


আরও পড়ুন:Purba Burdwan Historical Places : ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়স্থান সমৃদ্ধ, পূর্ব বর্ধমানের কোথায় কোথায় ঘোরা যেতে পারে ?


 


বিদ্যাসাগর সেতু


হাওড়া ব্রিজের থেকে তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও, বহুদিন থেকেই কলকাতা আর জেলার মধ্যে সংযোগ রক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এই বিদ্যাসাগর সেতু। চারটে পিলার আর ১২১টা লোহার দড়ির এই ব্রিজ নজর কাড়ে সৌন্দর্য্যের দিক থেকেও। ব্রিজের একাংশ থেকে কলকাতার একটা বিশাল অংশ দেখা যায়। বহু বাংলা ছবির শ্যুটিং হয়েছে এখানে। তবে বিদ্যাসাগর সেতু নিয়ে পায়ে হাঁটার অনুমতি নেই। কলকাতার দিক থেকে এলে গাড়ি করে পৌঁছে যেতে পারেন এই ব্রিজে। নবান্ন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এই ব্রিজের সৌন্দর্য্য দেখতে গাড়িতে সফরই সবচেয়ে ভাল 


গড়চুমুক


হুগলি আর দামোদরের তীরে এই স্থানটি বেশ জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। এখানে হাওড়া জেলা পরিষদের দুটি বাংলো রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো বাংলো ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি ডিয়ার পার্ক। হুগলি আর দামোদরের সৌন্দর্য্য আর শান্ত প্রকৃতি চোখ জুড়িয়ে দেবে। শীতের রোদে কাছাকাছির মধ্যে ছুটির আমেজ পেতে পৌঁছে যান গড়চুমুক।


এ জে সি বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন্স


বোটানিক গার্ডেন্সের সেই বিখ্যাত বটগাছের গল্প শুনেছেন নিশ্চয়ই। শীতের রোদ মেখে সবুজ ঘেরা এই জায়গাটায় খুব সহজে পৌঁছে যেতে পারেন আপনিও। বটগাছ ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ লাগোয়া এই জায়গাটা হতেই পারে আপনার শীতের ছুটির দিন কাটানোর গন্তব্য। এখানে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির গাছ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। বোটানিক গার্ডেন্সে প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।


 


কীভাবে যাবেন:


ফ্লাইটে আসতে চাইলে দমদম এয়ারপোর্ট থেকে চলে আসতে হবে হাওড়া স্টেশন। পেয়ে যেতে পারেন গাড়ি বা বাস। এই অঞ্চলের পরিবরণ ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল। ট্রেনে আসতে চাইলে নামে হবে হাওড়া স্টেশনে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে অধিকাংশ ট্রেনই হাওড়া আসে। যদি শিয়ালদা স্টেশনে আসেন, তবে সেখান থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারেন হাওড়া। সড়কপথে আসতে চাইলে পেয়ে যাবেন বাস বা গাড়ি। গঙ্গা পার করে আসতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন ফেরিও।