সুনীত হালদার, হাওড়া: শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্র চলছে। তবু ভরা বর্ষায় গঙ্গা অথবা রূপনারায়ণে সেভাবে দেখা নেই বাঙালির প্রিয় ইলিশের। 


হাওড়ার শ্যামপুরে মৎস্যজীবীরা যন্ত্রচালিত নৌকা নিয়ে নদীর মোহনাতে মাছ ধরতে গেলেও জালে ইলিশের দেখা নেই। ফলে সমস্যায় পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। 


তাঁরা জানিয়েছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে ছোট অবস্থায় ইলিশ অতিরিক্ত ধরার কারণে এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইলিশ বাঁচাতে ৬১ দিনের বদলে ১২০ দিন মাছ ধরা বন্ধ করতে চলেছে রাজ্য সরকার।


ফি-বছর বর্ষায় গঙ্গা অথবা রূপনারায়ণের বুকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা অথবা যন্ত্রচালিত নৌকা নিয়ে কয়েক হাজার মৎস্যজীবী ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। টাটকা ইলিশ বিক্রি করে বাজার থেকে ভালই দাম পান মৎস্যজীবীরা। এমনকি কলকাতা থেকেও টাটকা ইলিশ কিনতে গাদিয়াড়া আসতেন বহু মানুষ। 


কিন্তু এবছরের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। পেট্রোল ও ডিজেল খরচ করে নদীর বুকে অথবা মোহনা পর্যন্ত গেলেও সারা দিনে জালে দু-তিন কেজির বেশি ইলিশ উঠছে না। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কীভাবে এই ক্ষতি সামাল দেবেন। 


এদিকে পশ্চিমবঙ্গ পশু ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ একুয়াকালচারের বিভাগীয় প্রধান শিবকিঙ্কর দাস জানান, নদীর মোহনাতে যন্ত্রচালিত নৌকা এবং ট্রলারগুলি অতিরিক্ত ছোট সাইজের জাল ব্যবহার করে ছোট সাইজের খোকা ইলিশ ধরার ফলে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।


এর পাশাপাশি নদীর গভীরতা কমে যাওয়ার সঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে নদীতে জলের প্রবাহ এবং ঘোলাটে ভাব কমে যাওয়ার কারণে ইলিশ সাগর থেকে নদীর মিষ্টি জলে ঢুকছে কম। এর সঙ্গে নদীর দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। 


তিনি আরও জানান, ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি করতে ছোট ইলিশ ধরার প্রতি নজরদারি আরও কড়াকড়ি করতে হবে। তবেই বাঁচবে ইলিশ। 


রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, এবছর নজরদারি বাড়ানোর ফলে ৫০০ গ্রামের কম মাছ ধরা কমেছে। তিনি বলেন, সরকারি পর্যায়ে অফিসাররা মৎস্যজীবীদের সতর্ক করার পাশাপাশি বিভিন্ন মৎস্যজীবী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে জেলেদের সতর্ক করার কাজ করছেন।


তিনি দাবি করেন, ছোট মাছ ধরলে ট্রলার মালিকদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে বলেও তিনি হুশিয়ারি দেন। এর পাশাপাশি এমাসেই নতুন নির্দেশ জারি হতে চলেছে। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ৬১ দিনের পরিবর্তে ১২০ দিন পর্যন্ত বলবৎ করা হবে বলে জানান তিনি।