রেজিনগর : একদিকে নতুন দল ঘোষণার সভার প্রস্তুতি চলছে। অন্যদিকে, শুক্রবার মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদের জমিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ৬ ডিসেম্বর, মুর্শিদাবাদে হুমায়ুন কবীরের প্রস্তাবিত 'বাবরি' মসজিদের শিলান্য়াস হয়েছে। নির্মাণকাজ এখনও শুরু হয়নি। তাতেই, মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার এখানেই নমাজ পাঠ করতে আসেন হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, "গোটা বাংলার মুসলমান না, ত্রিপুরা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ সমস্ত জায়গা থেকেই আজকে লোক এখানে...৬ ডিসেম্বর ছিল শনিবার। আজকে আপনি দেখে নিন ক' লাখ লোক এখানে নমাজ পড়তে এসেছেন।" বীরভূমের এক বাসিন্দা বলেন, "আমরা বীরভূম থেকে আসছি... মুরারই থেকে। আজকে জুম্মার নমাজ পড়ার জন্য...বাবরি মসজিদ নতুন আমাদের গর্ব হয়েছে।" 

Continues below advertisement

হুমায়ুন কবীরের প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদ নিয়ে মুর্শিদাবাদে প্রবল উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। একদিকে মসজিদের জন্য শ'য়ে শ'য়ে ইট নিয়ে আসছেন সমর্থকরা। অন্যদিকে, উপচে পড়েছে অনুদানের বাক্স। সূত্রের দাবি, ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাবরি মসজিদের জন্য নগদ ও অ্য়াকাউন্টে সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি অনুদান জমা পড়েছে। শুক্রবারও দেখা যায় এই ছবি...। কেউ দান বাক্সে দিচ্ছেন, কেউ আবার সরাসরি টাকা দিচ্ছেন হুমায়ুন কবীরের হাতে। হাতে হাতে টাকা নিচ্ছিলেন শুরুতে। পাঞ্জাবির পকেটে রাখছিলেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্য়ে তা উপচে পড়ার জোগাড়। সঙ্গে সঙ্গে ব্য়াগ আনতে বলেন হুমায়ুন কবীর। সেই ব্যাগও মুহুর্তে ভর্তি।

প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদের শিলান্য়াসের পর থেকেই শুরু হয়, ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের দু'পাশে দোকান খোলার হিড়িক। সবেমাত্র তৈরি হওয়া খাবার দোকানগুলোতে লম্বা লাইন। হোটেল ব্যবসায়ী ইমরান শেখ বলেন, "আমাদের বেচা-কেনা প্রতিদিনই প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা... আমরা বেচা-কেনা করি। আমরা সামাল দিতে পারছি না কোনওভাবেই। ৯ দিন ধরে চলছে। শুক্রবার আর রবিবার আমরা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বেচা-কেনা করি। প্রায় ২০ থেকে ২৫টা হোটেল অলরেডি হয়ে গেছে।" রেজিনগরের অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, "প্রচুর বিক্রি বাড়ছে। যত লোকের চাপ হচ্ছে, তত বিক্রি বাড়ছে।" 

Continues below advertisement

হরেকরকম জিনিসের পাশাপাশি, দেদার বিকোচ্ছে, love Babri masjid ও হুমায়ুন কবীরের নাম লেখা টি-শার্ট। উৎসাহী মানুষের একাংশের দাবি, হুমায়ুন কবীর নতুন দল গড়লে সেখানেই নাম লেখাবেন তাঁরা। নদিয়ার পলাশির বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, "উনি যে দলে যোগ দেবেন আমরা সেই দলে যোগ দেব।" 

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, হুমায়ুনকে ঘিরে এই ভিড়ের ছবি তৃণমূলের জন্য় উদ্বেগের হতে পারে। কারণ, ২০১১ থেকে এরাজ্য়ের সংখ্য়ালঘু ভোটব্য়াঙ্কে কার্যত একচেটিয়া আধিপত্য় তৃণমূলের। তবে এবার হুমায়ুন সংখ্য়ালঘু ভোট কাটলে, তাতে তৃণমূলের ভিত দুর্বল হয়ে যাবে না তো ? 

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র দেবজিৎ সরকার বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখন এসব নিয়ে আগ্রহী নন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ একটা বিষয় নিয়েই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন যে, '২৬-এ কবে ওই দিনটা আসবে ? তিনি পদ্মফুলে বোতাম টিপবেন, ভোট ভাগ হতে দেবেন না, তিনি তৃণমূলকে হারাবেন এবং বিজেপিকে জেতাবেন।"

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, "এটা বিজেপি-তৃণমূল, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রশাসন মিলে '২৬-এর নির্বাচনের আগে গা-জোয়ারি করে...মানুষ বলছে কাজের কথা, শিক্ষার কথা, পরিযায়ী শ্রমিকের কথা...কিন্তু ওরা জোর করে এই যে স্লোগানগুলো বললে...এগুলো সব ৩০ বছর ধরে উত্তর ভারতে চলেছে, পশ্চিম ভারতে চলেছে। এখানে তার অ্যাকশন রিপ্লে করার চেষ্টা করছে।"  

পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "মানুষ জানেন গোটা ভারতে বিজেপিকে রুখতে পারে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। আর বাংলায় যদি বিজেপিকে হারাতে হয়, সরাসরি ভোট দিতে হবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের। একটা ভোট অন্য কাউকে দেওয়ার অর্থ, ঘুরিয়ে বিজেপিকে সাহায্য করা, বিজেপি যেটা চাইছে...বিজেপিই তো এদের প্রচারের ব্যবস্থা করে দিল।"