কলকাতা: ‘আমাদের আমলে কাগজ আছে, তাই দুর্নীতি ধরা পড়ে। তোমাদের আমলে কোনও কাগজ নেই, আমরা খুঁজে পাইনি।’ বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গনে শিক্ষারত্ন সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে গিয়ে এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় কার্যত তোলপাড় গোটা রাজ্য। জেল হেফাজতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গেই আজ শিক্ষক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ফের মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ন্যায়বিচার যাঁরা পাননি, তাঁরা আমাদের আমলেই তা পাবেন। ‘চাকরি দিতে চাই, কেউ কেউ পিআইএল করে জীবনটাই পিআইএল করে দিয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি ঘিরে উত্তাল রাজ্য! গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায়। চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল! এই আবহে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান থেকে ত্রিমুখী কৌশল নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ থেকে তাঁর সরকারের দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করলেন। আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন আন্দোলনকারীদের এবং সেইসঙ্গে সিপিএমকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নিশানায় বিজেপিও।
এ প্রসঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কাজ করতে করতে মানুষ একটা দুটো ভুল করতেই পারে, ওই যে মধ্যপ্রদেশে ব্যাপম হল আপনারা দেখেছেন তো। এখানকার এডুকেশন মিনিস্টারকে গ্রেফতার করা হয়েছে আজও? ৫৪ জন সুইসাইড করেছিল। সরকারে থাকতে গেলে, অনেক জায়গা হাজারও লক্ষ জায়গা, নিচুতলায় কেউ একটা করলে, দোষটা আসে ওপরতলায়। পরে নিচুতলাকে ধরতে ধরতে সে পালিয়ে যায়।
ফের পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আমি কত টাকার মালিক হলাম, এটা আমার পরিচয় নয়। পয়সা আজ আছে, কাল নেই, ফুরিয়ে যাবে। আপনারা যদি আমায় বলেন, আপনি হান্ড্রেড পার্সেন্ট কন্ট্রোল করতে পারবেন? ভগবানও হান্ড্রেন্ড পার্সেন্ট কন্ট্রোল করতে পারে? আমি কে, আমি একটা সাধারণ মানুষ। একটা খারাপ মানুষ, কী একটা খারাপ ব্যবহার করল, তার জন্য পুরো সমাজটাকে, কুৎসা করে উগড়ে দিলাম, আর সবাইকে একই জায়গায় ফেললাম, এটা ঠিক হয় না।
রাজ্য সরকারি একাধিক চাকরির ক্ষেত্রে বেনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল সরকার। এই পরিস্থিতিতে ফের একবার কোনটা ‘দুর্নীতি’, আর কোনটা ‘ভুল’...সেই ফারাকের দিকে ইঙ্গিত করে, ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও বলেন, এক্ষেত্রে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন, রাইট টু মেক ব্লান্ডার্স। ভুল করাটাও একটা অধিকার। আর অশোক গাঙ্গুলী, আমার ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে সুসম্পর্ক নেই, কিন্তু তিনি একটা রায় দিয়েছিলেন কোর্টে। যদি কোনও ক্ষেত্রে দেখ, কেউ একটা ভুল করেছে, একটা ভুল হয়ে গেছে, কেউ একটা ডিপ্রাইভড হয়েছে, তাহলে তোমরা এটাকে রেকটিফাই করে নাও। সিপিএমের আমলে বড় একটা স্বাস্থ্য কেলেঙ্কারি হয়েছিল, এবং উনি সেটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।
নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ সরকারের প্রধান হিসাবে নরমে-গরমে পাল্টা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তাতে কি বিরোধীদের আক্রমণের ঝাঁঝ আদৌ কমবে, উত্তর পাওয়া যাবে আগামী দিনেই।