মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: গঙ্গা ভাঙনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই একাধিকবার হয়েছে রাজ্যবাসীর। কেউ ভুক্তভোগী। কেউ দেখেছে খবরে। তবে স্কুলের পাশে মাটির বড় বড় চাঙড় নদীর গ্রাসে চলে গিয়েছে, এই নিয়ে উত্তেজনাও ছড়ায়নি। সেসময় গঙ্গা চলে এসেছিল হুগলি জেলার একটি স্কুলের কয়েক ফুটের মধ্য়ে। হুগলির বলাগড়ের জিরাট গ্রাম পঞ্চায়েতের খয়রামারি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সেসময় আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্টও। নিঃসন্দেহে এই ঘটনাটি ভয়াবহ। তবে খনির কারণে ভূমিধসও কম বিপজ্জনক নয়। আর এবার ফের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বর। পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুরে স্কুলের পাশে ফের নেমেছে ধস ! আতঙ্কিত পড়ুয়া থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারা। মূলত ওই স্কুলের পাশেই রয়েছে হরিপুর কয়লা খনি।
কয়েক বছর আগেই কয়রা তোলার পর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই কয়লা খনি। স্থানীয় পঞ্চায়েতের অভিযোগ কয়লা তোলার পর ঠিকমতো বালি ভরাট না করার কারণেই এই ধরনের ধসের ঘটনা খনি অঞ্চলে মাঝেমধ্যেই ঘটে। স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। আপাতত ওই জায়গাটুকু ফেন্সিং দিয়ে ঘিরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। প্রসঙ্গত অতীতে এই খনির কারণেই একাধিক ভয়াবহ ধসের ঘটনার উদাহরণ রয়েছে এই জেলায়। ১৯৮৯ সালে রানিগঞ্জের কয়লাখনিতে আটকে পড়েছিল একাধিক মানুষ। যা নিয়ে অক্ষয় কুমারের ছবি 'মিশন রানিগঞ্জ: দ্য় গ্রেট ভারত রেসকিউ' তৈরি হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, এই ঘটনা এখন আর পুনরাবৃত্ত হয় না। এই জেলা গত কয়েক বছরে একাধিকবার ধসের ঘটনা ঘটেছে।
গত বছরও পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে কয়লা খনি সংলগ্ন শীর্ষা গ্রামে একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছিল। বিপদের আশঙ্কায় কাঁটা ছিল গ্রামবাসীরা। ক্ষতিপূরণের দাবি এবং পুনর্বাসনের দাবিতে ইসিএল আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল সেবার ক্ষতিগ্রস্তরা। ফাটলের ঘটনাতেও রাজনৈতিক তরজার ছবি উঠে এসেছিল। রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছিল।এই ঘটনায় যাবতীয় ক্ষোভ গিয়ে পড়েছিল ইসিএল-এর উপর। ইসিএল (ECL) আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন, পাহাড়েও IT হাব, বাড়বে বেতন, জিটিএ-কে আরও ৭৫ কোটি টাকা ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
স্থানীয় সূত্রে দাবি উঠেছিল, পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে কয়লা তোলার জন্য মাঝেমধ্যেই খনিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। অভিযোগ, তার জেরেই খনি সংলগ্ন শীর্ষা গ্রামে একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। অথচ, এই বিষয়ে আমলই দিচ্ছে না ইসিএল কর্তৃপক্ষ।পশ্চিম বর্ধমানেরই অন্ডালে ইসিএলের খোলা মুখ খনি এলাকায় ধসের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল তা আগেও। সেবারও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইসিএলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বারবার জানালেও কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ইসিএল কর্তৃপক্ষ।