শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের পদক্ষেপে কিছুটা ভুল হয়েছিল। কোচবিহারে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে, অকপট স্বীকারোক্তি উদয়ন গুহর (Udayan Guha)। যদিও একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ (Rabindranath Ghosh) দাবি করলেন, গত পঞ্চায়েত ভোটে কোনও অশান্তিই হয়নি। উল্টে ১৯-এর লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের জন্য দলেরই একাংশকে দায়ী করলেন তিনি। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
অকপট স্বীকারোক্তি উদয়ন গুহর:বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগেই, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কোচবিহারের দুই প্রবীণ তৃণমূল নেতার মুখে শোনা গেল দু’রকম কথা। তাও আবার একই মঞ্চে, ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভুল পদক্ষেপের কথা স্বীকার করলেন একজন। অন্যজন দাবি করলেন, তিনি জেলা সভাপতি থাকাকালীন কোনও অশান্তিই হয়নি। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী উদয়ন গুহর কথায়, “২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের খানিকটা পদক্ষেপ ভুল হয়েছিল।’’ অন্যদিকে, জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমি যখন সভাপতি ছিলাম কারও মাথা ফাটেনি, কোমর ভাঙতে হয়নি।’’
বৃহস্পতিবার কোচবিহার শহরের সুকান্ত মঞ্চে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটকও। সেই মঞ্চেই ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এক এক রকম দাবি করতে শোনা গেল উদয়ন গুহ ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। উদয়ন গুহর কথায়, “যেভাবে জয়ী হয়েছিলাম, আমাদের কর্মীরা তা মেনে নিতে পারেনি। এর ফলে ১৯ -এর নির্বাচনে পরাস্ত হতে হয়েছে। এবার মানুষ নিজে ভোট দেবেন, যাকে পছন্দ হয়, সেই প্রার্থীকে ভোট দেবেন।’’
উদয়ন গুহর পরই বক্তব্য রাখতে ওঠেন কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তির কথা না মানলেও, ১৯-এর লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের জন্য মঞ্চে উপস্থিত দলেরই নেতাদের একাংশকে নিশানা করলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেউ কেউ আমাদের নির্দল প্রার্থী দিয়ে হারিয়েছে। ১৯-এর লোকসভা নির্বাচন, যেখানে জয় নিশ্চিত ছিল, সেখানে কিছ লোক পিছন থেকে দলকে ছুড়ি মেরে হারিয়েছে, এবং তাঁরা আজ এই মঞ্চে আছেন।’’
২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠেছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত! একছত্রভাবে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। কোচবিহারে ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে শাসকদলের দখলে গেছিলেন ১২৬টি। দুই নেতার দু-রকম দাবিতে, আরও স্পষ্ট হল তৃণমূলের ফাটল! যা নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। জেলা বিজেপির সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, “তৃণমূলের গাইডলাইন কেউ মানে না, তাই প্রাক্তন ও বর্তমান উন্নয়নমন্ত্রী একরকম কথা বলছেন, মানুষ জানে, ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী হয়েছিল।’’