ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা :  গত কয়েক বছরের হু হু করে বেড়েছে অনলাইনে কেনাকাটি। এমনকি কাঁচা বাজার, মুদির দোকানের টাকাও অনলাইনে দিচ্ছেন অনেকে। রোজকার জীবনকে আরও নির্ঝঞ্ঝাট করে তুবতে এখন ফোন জুড়ে হাজারো অ্যাপ। আর তার মারফত জিনিসপত্র কেনাকাটি করে অনেকটা সময়ই বাঁচিয়ে ফেলা যাচ্ছে। কিন্তু আমার আপনার মুঠোফোনে থাকা তথ্য কি অজান্তেই পৌঁছে যাচ্ছে না তো পাকিস্তান ও চিনে বসে থাকা ষড়যন্ত্রীদের হাতে? অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে অথবা অথবা ফুড ডেলিভারি সংস্থার অ্যাপ মারফত খাবার অর্ডার করতে গিয়ে কি অজান্তেই বিপদে জড়িয়ে যাচ্ছি আমরা?


অনলাইন কেনাকাটি যেমন অনেকটা সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে, তেমনই বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। রাজ্য পুলিশের STF-এর একটি তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো! মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে যে সব লেনদেন হয়, তার সিংহভাগই ওটিপি নির্ভর। আর এই ওটিপি বিক্রি করেই ফোনের তথ্য হাতানোর কারবার ফেঁদে বসেছে একটা বড় চক্র।


বাংলা থেকে হিমাচলপ্রদেশ হয়ে চিন, পাকিস্তান পর্যন্ত সক্রিয় এই ষড়যন্ত্র চক্র ! এমনই দাবি করেছে রাজ্য পুলিশের STF। ওটিপি বিক্রি চক্রের এক পাণ্ডা সহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২ সপ্তাহ আগে মুর্শিদাবাদ, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা রুজু হয় মুর্শিদাবাদ থানায়।


ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ভিন রাজ্যেও ছড়িয়ে রয়েছে ওটিপি বিক্রি চক্রের শিকড়। ৩ ফেব্রুয়ারি হিমাচলপ্রদেশের সিরমৌড়ে হানা দিয়ে গৌরব শর্মা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। তিনি এই মামলার প্রধান চক্রীদের একজন বলে মনে করছে পুলিশ।  ৩৫ বছরের এই যুবক বিভিন্ন অ্যাপ থেকে এই ওটিপি সংগ্রহের কাজটা করত, বলে পুলিশের দাবি। তার যোগাযোগ আন্তর্জাতিক গ্যাংগুলির সঙ্গে। IRCTC, Whatsapp, Telegram, Swiggy, Zomato ইত্যাদি, বিভিন্ন অ্যাপের মারফত কেনাকাটার সময় লাগে ওটিপি। এক অভিনব পদ্ধতিতে এই ওটিপিগুলি মুহূর্তে চুরি করত গৌরব শর্মা। তারপর টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ফোন নম্বর সহ সেই সংগ্রহ করা ওটিপিগুলি বিক্রি করত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে। 


গতকাল ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে রাজ্যে আনা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের STF সূত্রে দাবি, পাকিস্তানে এবং চিনে থাকা কয়েকজনকে ওটিপি বিক্রি করা হয়েছে। ধৃত গৌরব শর্মা ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রতারণাচক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতেন বলে দাবি এসটিএফের।