কলকাতা: বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবি লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য সরকারের কর্মীদের একাংশ (DA Case)। সেই নিয়ে মামলার শুনানিতে যদিও DA আদৌ মৌলিক অধিকার কি না, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল সুপ্রিম কোর্টে। কলকাতা হাইকোর্ট এর আগে 'DA মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে' বলে মন্তব্য করেছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কারোল। (Supreme Court)
রাজ্য সরকারি কর্মীদের DA নিয়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। সেখানে রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধিকে সামনে রেখে সহানুভূতি থেকেই সরকারি কর্মীদের DA দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের হারে DA দিতে হবে বলে কোথাও লেখা নেই। রাজ্যের সরকারি কর্মীরা সেই নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে পারেন না। কারণ DA তাঁদের মৌলিক বা আইনি অধিকারের মধ্যে পড়ে না। দেশের ১৩টি রাজ্যে কেন্দ্রীয় হারে যে DA দেওয়া হয় না, তাও আদালতে তুলে ধরেন রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা। (DA Case)
সেই নিয়ে শুনানি চলাকালীন বিচারপতি কারোল বিষয়টি নিয়ে সবপক্ষের আইনজীবীর মতামত চান। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "কলকাতা হাইকোর্ট বলেছিল যে মহার্ঘভাতা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে আপনাদের কী মতামত। আমরাও বিষয়টি বিবেচনা করে দেখি। বিষয়টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কি না পর্যালোচনা করে দেখা হয়। কিন্তু এই (হাইকোর্টের) পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমাদের মনেও সন্দেহ আছে।"
বিচারপতি কারোলই নন শুধুমাত্র, DA যে মৌলিক অধিকার নয়, সেব্যাপারে শীর্ষ আদালতে এদিন ঐক্যমত্য প্রকাশ করেন দু'পক্ষের আইনজীবীরাও। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, "ওটা হাইকোর্টের একটি পর্যবেক্ষণ মাত্র। নির্দেশের মূল বিষয় এটা ছিল না। আমাদের মতে, এটি একটি বলবৎযোগ্য অধিকার, যেটা দিতে বাধ্য রাজ্য সরকার।" এতে বিচারপতি কারোল বলেন, "তার মানে আপনারা দু'পক্ষই বলছেন, এটা মৌলিক অধিকার নয়?" সরকারি আইনজীবীরাও তাতে সম্মতি জানান।
DA-র হার কী ভাবে নির্ধারিত হয়, এদিন রাজ্যের কাছে জানতে চায় আদালত। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী DA নির্ধারিত হয় কিনা জানতে চান বিচারপতি পিকে মিশ্র। এতে রাজ্য জানায়, রোপা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মলায় এর আগেও, শীর্ষ আদালতে যখন DA মামলা ওঠে, সেই সময় ২৫ শতাংশ বকেয়া DA দিতে বলা হয় রাজ্য সরকারকে। এদিনও রাজ্য সরকারি কর্মীদের কিছু টাকা অন্তত মিটিয়ে দিতে বলা হয়। এতে রাজ্যের তরফে বলা হয়, "বাজারদরের ভিত্তিতে DA দিতেই হবে, এমন কোথাও বলা নেই। ট্রাইবুনালের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এভাবে টাকা দিতে পারি না আমরা। ১০০ দিনের টাকাও পাই না। সেই টাকাও আমাদের নিজেদের দিতে হচ্ছে। বাজারদরের কথা বলে এভাবে রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায় না।" কোনও DA বাকি নেই, বিজ্ঞপ্তি জারি করে সময় মতো দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয় রাজ্যের তরফে।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, "রাজ্য সরকার ছ'বার নিম্ন আদালতে হেরেছে। সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে আশাবাদী আমরা। আমাদের পাওনা টাকা ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের। প্রায় ১৬ বছর আগে রাজ্য পেয়ে গিয়েছে ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন মারফত। সুতরাং টাকা নেই কথাটি মিথ্যে। ১০০০০ কোটি টাকার DA দিতে যে নির্দেশ দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট, সেই সময় ঋণের কথা রটিয়ে দেওয়া হয়। পরে দেখলাম পাড়ায় পাড়ায় সমাধানে ওই টাকা চলে গেল। রাজ্য় সরকার মিথ্যে বলছে। সুপ্রিম কোর্টেও তা প্রমাণিত হয়ে যাবে।"
এ নিয়ে ফের বুধবার ফের শুনানি রয়েছে আদালতে। আজ রাজ্য সরকারের বক্তব্য শোনা হয়েছে, কাল আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মীদের কথা শোনা হবে।