গুয়াহাটি: ডাক্তারি না পড়েই ডাক্তার? স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সেজে রোগী দেখা থেকে, অস্ত্রোপচার, কিছুই বাদ দেননি। অসম থেকে গ্রেফতার হলেন ভুয়ো চিকিৎসক। সরাসরি অপারেশন থিয়েটার থেকেই গ্রেফতার করা হল তাঁকে। এক রোগিণীর সন্তান প্রসব করাচ্ছিলেন অস্ত্রোপচার করে। সেই সময়ই ছুরি-কাঁচি কেড়ে নিয়ে, তাঁর হাতে হাতকড়া পরাল পুলিশ। (Assam News)
অসমের শিলচর থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। ভুয়ো চিকিৎসকের নাম পুলক মালাকার। গোটা ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে অসমে। ধৃত পুলককে ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ বলে উল্লেখ করছেন কেউ কেউ, সঞ্জয় দত্ত অভিনীত জনপ্রিয় হিন্দি ছবির প্রসঙ্গ টেনেই। বাস্তবে এমন কিছু ঘটতে পারে বলে এখনও বিশ্বাস করতে চাইছেন না অনেকে। (Assam Fake Doctor)
স্থানীয় সূত্রে খবর, শিলচরের সবচেয়ে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যশালী শিবসুন্দরী নারী শিক্ষা সেবা আশ্রম হাসপাতালে এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার করছিলেন পুলক। সেই সময় অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত এক দশক ধরে চিকিৎসক হিসেবে দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত পুলক। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁকে চিনতেন সকলে। অস্ত্রোপচার করে প্রসূতির গর্ভের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতেন। এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০টি সি-সেকশন বা সিজার করেছেন তিনি।
কিন্তু নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে দাবি করলেও, রোগীদের শরীরে ছুরি-কাঁচি চালালেও, ডাক্তারির ডিগ্রি নেই পুলকের কাছে, না আছে সার্টিফিকেট, না লাইসেন্স। তার পরও এত দীর্ঘ সময় ধরে সকলের নজর এড়িয়ে অস্ত্রোপচার, চিকিৎসা করে আসছিলেন তিনি। হাতেনাতে তাঁকে ধরা গেলেও, এতদিন তাঁর উপর কারও নজর পড়ল না কেন, প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর থেকে আস্থা চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। গোটা ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলেও উল্লেখ করছেন কেউ কেউ।
বিষয়টি জানাজানি হতেই শিবসুন্দরী নারী শিক্ষা সেবা আশ্রম হাসপাতালের বাইরে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। ওই ভুয়ো চিকিৎসক তো বটেই, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন তাঁরা। স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, “এটা তো মানবতা বিরোধী অপরাধ? হাসপাতালকে বিশ্বাস করে চিকিৎসা করাতে আসা। আর সেখানে এই জালিয়াতি?”
পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধের ব্যাপ্তি জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে হাসপাতালের আধিকারিক থেকে কর্মীদের। পুলিশ জানিয়েছে, এটা জালিয়াতিই। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বিষয়টি। আসলে অসমের শ্রীভূমির বাসিন্দা পুলক। সোমবার আদালতে তোলা হয় তাঁকে। আপাতত পাঁচদিনের হেফাজত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তদন্তে নামে তারা। দেখা যায়, পুলকের সমস্ত সার্টিফিকেট, কাগজপত্র জাল।
অসমে ভুয়ো চিকিৎসক যদিও এই প্রথম ধরা পড়ল না। এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে এসেছে সেখান থেকে। যে কারমে ভুয়ো চিকিৎসক ধরতে বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেছে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার। চলতি বছররে জানুয়ারি মাসে একটি বিশেষ টিমও গঠন করা হয়, যার আওতায় ভুয়ো চিকিৎসক এবং কোয়াক ধরার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এখনও পর্যন্ত ওইটিম ভুয়ো চিকিৎসক এবং কোয়াকদের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের করেছে। জানা যাচ্ছে, নিম্নবিত্ত, দরিদ্র মানুষই প্রধানত ভুয়ো চিকিৎসক এবং কোয়াকদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন।