কলকাতা : 'বার বার মনে করছি যে, নিজের হাতে বিসর্জন দিয়ে এলাম। বাবা, আমি আর তোকে বাবা বলে ডাকব না...', ছেলের মৃত্যুর পর ডুকরে উঠে বলেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ( Jadavpur University ) মৃত পড়ুয়ার বাবা। আর বুধবার প্রকাশ্যে এল আরেক বাবার প্রতিক্রিয়া, যাঁর ছেলে ধরা পড়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনার তদন্তে।  দীপশেখর দত্ত । যাদবপুরকাণ্ডে তদন্ত শুরু হওয়ার পর প্রথম গ্রেফতার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং মেন হস্টেলের প্রভাবশালী দাদা, সৌরভ চোধুরী। এরপর তাঁকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্ত নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই পড়ুয়াকে।  


ধৃত দীপশেখরের বয়স ১৯। তিনি অর্থনীতির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বুধবার সেই ছাত্রের বাবার আচরণে ধরা পড়ল চরম ঔদ্ধত্য ! 'যাঁরা পড়াশোনা করে, যাঁরা হস্টেলে থাকে তাঁরা কি জানে না , ব়্যাগিং ছাড়া কিছু হয় না?' তাঁর গলাতে যেন ছেলের কাজেরই স্পষ্ট সমর্থন। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে প্রায় দাবড়ে উঠে তিনি বলেন, 'আমি কেন বলব, ব়্যাগিং হয়, কেউ কি জানে না...মুখ্যমন্ত্রী , প্রধানমন্ত্রী সবাই জানে !' দীপশেখরের বাবার বেলাগাম উক্তি, ভারতবর্ষের যে কোনও কলেজেই ব়্যাগিং হয়, আমরা জানি তো !  



আরও পড়ুন :


'অপরাধী সাজানো হয়েছে', দাবি সৌরভের, 'কাউন্সেলিং হোক' দাবি মনোতোষ, দীপশেখরের আইনজীবীর


তাহলে কি ব়্যাগিং বন্ধ করা উচিত নয় ? তাঁর জবাব, বন্ধ তো করা উচিত, কে করবে, বছরের পর বছর চলে আসছে।  


আর যার প্রাণ গেল ? দীপশেখর দত্তের বাবার মুখে সঙ্গেসঙ্গে উত্তর ... সে যার প্রাণ গেছে, তার ব্যাপার ! একবার নয় একাধিকবার তাঁর মুখ থেকে শোনা গেল এই প্রতিক্রিয়া। যা কার্যত স্তম্ভিত করে দিয়েছে সকলকে। 

দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে, চলে গেছে একটা প্রাণ। কয়েক বছরের জন্য যে হস্টেল দ্বিতীয় ঘর হয়ে ওঠার কথা ছিল, অভিযোগ সেখানেই দাদা-দের ভয়ঙ্কর অত্যাচারে প্রাণ চলে গেছে নদিয়ার পড়ুয়ার। সেখানে ভেঙে পড়া তো দূরের কথা, অভিযুক্তের বাবার গলায় সহানুভূতি, আবেগ, লজ্জা, অনুশোচনা, কিছুই নেই। 


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার  মর্মান্তিক পরিণতি দেখেও এতটুকু বিচলিত নন ধৃত পড়ুয়ার বাবা। বরং ব়্যাগিং কী এমন ব্যাপার, এমন ভাব করে, বিষয়টিকে লঘু করার চেষ্টা করলেন যেন !  


মঙ্গলবার, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত সৌরভ চৌধুরী, মনোতোষ ঘোষ ও দীপশেখর দত্তকে আলিপুর আদালতে তোলে পুলিশ। সব পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর, ধৃত তিনজনকে ফের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।