ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায়, পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ( Jadavpur University )  কাণ্ডে রাজ্যজুড়ে নিন্দা। দোষীদের শাস্তির দাবি দিকে দেকে। লজ্জায় মাথা হেঁট হচ্ছে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগে। পড়ুয়াদের একাংশেরই বিকৃতমনোভাব ও দুষ্কর্ম ঘিরে এখন রাজ্য়জুড়ে ছি ছি! আর শুধু দুষ্কর্ম করাই নয়, দুষ্কর্ম ঢাকতেও না কি মেধাবী মস্তিষ্কদের একাংশ রীতিমতো মাথা খাটিয়েছিল, যাতে মৃত্য়ুর পর সকলেরই এক বুলি হয়। বয়ানও যাতে হয় গতে বাধা। একাধিক পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার পর এমনই ধারণা পুলিশের। সেদিনের ঘটনার পর ঠান্ডা মাথায় প্রায় স্ক্রিপ্ট সাজানো হয়েছিল, পুলিশের প্রশ্নের জবাবে কী উত্তর দেবে, যাতে পুলিশের মনে সন্দেহ না তৈরি হয়। 


ছাত্র-মৃত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশ সূত্রে খবর, মফঃস্বল থেকে স্বপ্নপূরণে যাদবপুরে (JU Student Death) আসা ওই পড়ুয়ার মৃত্যুর পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্য়ে হস্টেলে ৪ বার জেনারেল বডির বৈঠক হয়। নেতৃত্বে ছিলেন হস্টেলে বসবাসকারী প্রাক্তনীরা। গত বুধবার,
রাত পৌঁনে ১২টা নাগাদ হস্টেলের (JU Hostel) বারান্দা থেকে পড়ে যায় নদিয়ার ওই পড়ুয়া। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে। পরের দিন সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। শুক্রবার, মৃতের বাবার বয়ানের ভিত্তিতে রুজু হয় FIR। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। শুরু হয় পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ। অর্থাৎ, ছাত্র-মৃত্যুর পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা, পুলিশ হস্টেলে গিয়ে পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সূত্রের দাবি, এই সময়ের মধ্যে ৪ বার জেনারেল বডির মিটিং হয় হস্টেলে। মূলত এই বৈঠকগুলোর এজেন্ডা ছিল, পুলিশ অফিসাররা কী প্রশ্ন করতে পারেন? তাদের প্রশ্নের কীভাবে সবাইকে একসুরে এক উত্তর দিতে হবে।  


নিরাপত্তারক্ষী জয়ন্তকুমার পাল বলেন, সেদিন রাতে জিবি মিটিং হয়েছিল কিনা দেখিনি, তবে সারা রাত ধরে জড়ো হচ্ছিল। ছোটাছুটি করছিল সকলে। 


পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ছাত্র ওপর থেকে পড়ে যাওয়া মাত্রই কয়েকজন তড়িঘড়ি হস্টেল ছেড়ে চলে যান। গা ঢাকা দেন কয়েকজন প্রাক্তনী। হঠাৎ করে কমে যায় হস্টেলের আবাসিকের সংখ্যা।


তদন্তকারী মনে করছেন, যেহেতু গোটা বিষয়টা সামনে চলে এলে একাধিক হস্টেল আবাসিকের যুক্ত থাকার তথ্য সামনে আসতে পারে, পাশাপাশি, প্রাক্তনীদের উস্কানির বিষয়ও প্রকাশ্যে চলে আসার জোরাল সম্ভাবনা, তাই তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতেই এই ধরনের শিখিয়ে-পড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি সবার এই একসুরে কথা বলাই পুলিশের মনে খটকা তৈরি করে। আর তারপরই একের পর এক গ্রেফতারি!