পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: যাদবপুরকাণ্ডে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করতেই ডিন অব স্টুডেন্টসকে ফোন করা হয়। পড়ুয়াকে দিয়ে লেখানো হয় চিঠি। সেই চিঠিতে অন্য একজনের নাম দিয়ে দায়ভার তার ঘাড়ে চাপানোর ছক কষা হয়েছিল। যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুর পিছনে গোটাটাই সাজানো চিত্রনাট্য, এমনটাই দাবি। 


পুলিশের দাবি, চিত্রনাট্যের প্রতি পরতে ভয়, দখলদারি, র‍্যাগিং। তদন্ত যত এগোচ্ছে, নিশ্চিত হচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, পড়ুয়াকে ভয় দেখানোর পিছনে ছিল সুস্পষ্ট পরিকল্পনা। পড়ুয়ার বিভাগে অন্য একটি ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য ভাগ বসাতেই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। 


গোটা পরিকল্পনায় শিখণ্ডী খাড়া করা হয়েছিল নদিয়ার হতভাগ্য পড়ুয়াকে। জিবি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, পড়ুয়া ভয় পেয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল, এই তথ্যই সকলের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যাদবপুরকাণ্ডে অভিযুক্তদের জেরা করে মিলেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, খবর পুলিশ সূত্রে।


যাদবপুরের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় রহস্যময় চিঠি ঘিরে চাঞ্চল্যকর তথ্যও উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, মেন হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে ওই ছাত্রকে সামনে বসিয়েই লেখা হয়েছিল চিঠি। এমনকি, জোর করে তাকে দিয়ে সই করানো হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে মানসিক নির্যাতন করার সময় শুধু প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরী বা দুই পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্ত নয়, জড়িত ছিল আরও অনেকে। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ ও বিভিন্ন  ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই অজ্ঞাতপরিচয়দের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। 


এর আগে পুলিশ জানতে পেরেছিল, ছাত্র মৃত্যুর পর, ২৪ ঘণ্টায় চার বার জেনারেল বডির মিটিং হয়েছিল হস্টেলে। নেতৃত্বে ছিলেন হস্টেলে থাকা প্রাক্তনীরা। পুলিশ কী কী জিজ্ঞেস করতে পারে, আর তার কী কী উত্তর দিতে হবে, সেগুলো রীতিমতো শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেখানে।


আরও পড়ুন, আতঙ্কে হস্টেল ছাড়ছেন বোর্ডাররা, কী পরিস্থিতি যাদবপুরে?


পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ছাত্র ওপর থেকে পড়ে যাওয়া মাত্রই কয়েকজন তড়িঘড়ি হস্টেল ছেড়ে চলে যান। গা ঢাকা দেন কয়েকজন প্রাক্তনী। হঠাৎ করে কমে যায় হস্টেলের আবাসিকের সংখ্যা।


তদন্তকারী মনে করছেন, যেহেতু গোটা বিষয়টা সামনে চলে এলে একাধিক হস্টেল আবাসিকের যুক্ত থাকার তথ্য সামনে আসতে পারে। পাশাপাশি, প্রাক্তনীদের উস্কানির বিষয়ও প্রকাশ্যে চলে আসার জোরাল সম্ভাবনা। তাই তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতেই এই ধরনের শিখিয়ে-পড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।