কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সৌমিত্র কুমার রায় ও সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : ৯ অগাস্ট রাতে যাদবপুরের মেন হস্টেলে র‍্যাগিং (Ragging) হয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির (Jadavpur University Internal Committe Report) রিপোর্টেই এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বলে সূত্রের খবর। শুধু তাই নয় ! র‍্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। এদিকে, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত সৌরভ চৌধুরীকে (Sourav Choudhury) জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University Student Death) প্রথম বর্ষের পড়ুয়া কি র‍্যাগিংয়েরই বলি হয়েছিলেন ? অভিযোগ উঠেছিল শুরু থেকেই। এবার সেই তত্ত্বই আরও জোরাল হল। কারণ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেই খবর, ৯ অগাস্ট রাতে, মেন হস্টেলে যে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সেই চাঞ্চল্যকর তথ্যই উঠে এসেছে।


সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, মেন হস্টেলে (Jadavpur University Main Hostel) আকছার র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। ৯ অগাস্ট রাতেও ঘটেছিল। মানসিকভাবে চাপে ছিলেন ওই ছাত্র। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India) নির্দেশ, ইউজিসি-র (UGC) গাইডলাইন মেনে র‍্যাগিং প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিয়ে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সূত্রের দাবি, অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও মেনে নেওয়া হয়েছে যে, র‍্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপে খামতি রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন এই বিস্ফোরক রিপোর্ট জমা পড়েছে উপাচার্যের কাছে।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি প্রায় ১৪০ জনের বয়ান রেকর্ড করেছে। সূত্রের খবর, অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি যাঁদের বয়ান রেকর্ড করেছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন যাদবপুরের রেজিস্ট্রার (JU Registrar) ও জয়েন্ট রেজিস্ট্রার। দাপুটে ছাত্রনেতা ও গবেষক অরিত্র মজুমদারেরও বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বয়ান ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে লিখিত জবাব নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জমা পড়েছে অনেক নথি।


এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে যেদিন অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সামনে এল, সেদিনই ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত সৌরভ চৌধুরীকে জেল হেফাজতে পাঠাল আলিপুর আদালত। এদিন সরকারি আইনজীবী, সৌরভকে জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদন জানান। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে জেলে গিয়ে যাতে সৌরভকে জেরা করা যায়, তার অনুমতি দেওয়া হোক। সৌরভের আইনজীবী আর্জি জানান, সৌরভ ছাত্র। জেলের অন্য আবাসিকদের সঙ্গে তাঁকে যেন না রাখা হয়।


সরকারি আইনজীবী বলেন, জেল সংক্রান্ত যে নিয়মাবলী আছে, এক্ষেত্রে তাই অনুসরণ করা হবে। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অভিযোগ করেন, এভাবে তাঁর মক্কেলকে কার্যত বাছাই করে টার্গেট করা হচ্ছে। সরকারি আইনজীবী জবাব দেন, হ্যাঁ, ঠিকই। এভাবেই এক ছাত্রকে বাছাই করে দল বেধে মারা হয়েছে। সৌরভের আইনজীবী যুক্তি দেন, এটা তো প্রমাণ হয়নি। তাহলে কী করে বলতে পারেন ?  তিনি অভিযোগ করেন, সৌরভের বিষয়ে তদন্তে এখনও পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি।

সরকারি আইনজীবীর জবাব, তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সব অভিযুক্তকে জেরা করে জানা গেছে যে, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে সমস্ত নির্দেশ দিতেন সৌরভ। তদন্তকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টায় তিনি যুক্ত। তাছাড়া, রক্তমাখা গামছা এবং ২টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সৌরভকে জেল হেফাজতেই পাঠানো হোক। সওয়াল জবাব শেষে সৌরভ চৌধুরীকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।


আরও পড়ুন- উঠল গোলি মারো স্লোগান, দেখানো হল জুতো, গেরুয়া শিবিরের কর্মসূচিতে উত্তপ্ত যাদবপুর


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial