শিবাশিস মৌলিক ও সৌমিত্র রায়, কলকাতা: বাংলাই হোক বা অন্য কোনও রাজ্য, অতীতে বার বার উঠেছে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ। নাম জড়িয়েছে বিভিন্ন নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু, এই রোগ নির্মূল হয়নি। (JU Student Death)
'থ্রি ইডিয়টস' ছবিতে ছবিতে 'র্যাঞ্চো'র ব়্যাগিংয়ের দাওয়াই দেখে নিশ্চয়ই হাততালি দিয়েছিলেন! কিন্তু বাস্তবটা ঠিক এই সিনেমার মতো নয়। ভীষণ কঠিন। (Jadavpur University)
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর নেপথ্যে বার বার উঠেছে এই প্রশ্ন। ব়্যাগিং ঘিরে উঠে এসেছে মারাত্মক সব অভিযোগ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গোটা বিশ্বের ইতিহাসে ব়্যাগিং রোগের কালো ছায়া দিনে দিনে দীর্ঘতর হয়েছে।
গতবছর ৭ নভেম্বর এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের বিশেষ ভাবে সক্ষম এক ছাত্র ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ জানান কর্তৃপক্ষের কাছে।
এই ঘটনার কয়েকদিন পরেই ১৬ নভেম্বর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র নিউটাউন ক্যাম্পাসের হস্টেলে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ জানান। গতবছর ১০ ডিসেম্বর সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজে, আইনের ছাত্রকে ব়্যাগিং , মারধর করার অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন: JU Student Death: সাহিত্যের টানে যাদবপুরে আসা, কিন্তু ধাস্তস্থ হওয়ার সময়টুকুও পেলেন না, অকালে ঝরে গেলেন তরতাজা স্বপ্নদীপ
১৯৯৬ সালে তামিলনাড়ুতে রাজা মুত্তিয়া মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া, ১৯ বছরের পোন নাভরাসুর রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে Ragging-এর অভিযোগ ওঠে। যে ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় জন ডেভিড নামে এক সিনিয়র ছাত্রকে।
২০০৯ সালে হিমাচল প্রদেশে ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া, ১৯ বছরের আমন সত্য খচরুর মৃত্যুতে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল আমনের। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
২০১২ সালে কর্নাটকের চিক্কাবল্লাপুরের শা-শিব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়ুয়া, ১৭ বছরের আজমল পিএম-এর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুতে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। নাম জড়ায় চার সিনিয়র পড়ুয়ার!
২০১৪-তে কলকাতা ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজির ছাত্র আকাশ আগরওয়ালের মৃতদেহ উদ্ধার হয় রেলট্র্যাক থেকে। অভিযোগ ওঠে, ব়্যাগিংয়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হন ২০ বছরের আকাশ।
গত বছর নভেম্বর মাসে নাগপুরের Government Medical College and Hospital-এ প্রথম বর্ষের এক MBBS পড়ুয়াকে ব়্যাগিংয়ের ভয়ঙ্কর অভিযোগ ওঠে। শেষ অবধি মেডিক্য়াল কলেজ কর্তৃপক্ষ ছ'জন MBBS ইন্টার্নকে সাসপেন্ড করেন।
গত বছর জানুয়ারি মাসে মুম্বইয়ের G S Medical College and KEM Hospital-এর এক ছাত্রীকে হস্টেলের রুমমেটদের বিরুদ্ধে লাগাতার জাতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য় করা, অভব্য় আচরণ করা, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে হস্টেল ওয়ার্ডেনের সামনেও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই এর শেষ কোথায়? এর শেষ কবে? কবে বন্ধ হবে এভাবে একের পর এক পড়ুয়ার চলে যাওয়া? উত্তর অধরাই।